গোলাম কিবরিয়া ও মাহমুদ হাসান : মেহেদী, আরিফ ও আল-আমিন। তারা তিন বন্ধু। এদের মধ্যে মেহেদী ও আরিফ মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন গ্রামের এক ওয়ার্কশপে। আর আল-আমিন ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় কিচেন শেফ হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এই তিন বন্ধু দীর্ঘ চার বছর ধরে দেশে ব্যতিক্রমী কিছু করার চিন্তা করছে। প্রথমে এরা এয়ারপ্লেন তৈরির কথা ভাবলেও অর্থ সঙ্কট থাকায় সেটি আর করা হয়নি। তবে এরা থেমে থাকেনি। নিয়েছে একটি হেলিকপ্টার তৈরির উদ্যোগ।
শুরুর দিকে তাদের এই কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয়রা হাস্যরস করলেও পরে পেয়েছে বাহবা। আর পরিবারের পক্ষ থেকে ছিল দ্বিমত। কিন্তু এখন উদ্যোক্তা তিন বন্ধুর এই হেলিকপ্টারটি দর্শনার্থীদের কাছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোট বিঘাই ইউনিয়নের কাজীর হাট বাজারে ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি মো: মেহেদী হাসান ও তার দুই বন্ধু মিলে নিজ মেধা ও উদ্যোগে তৈরি করেছেন একটি হেলিকপ্টার। ছোট বেলা থেকে দারিদ্র্যের অভাবে লেখা পড়া করতে না পারা মেহেদী কাজ শুরু করেন ওয়ার্কশপে। তখন থেকেই ভিন্ন কিছু করার চিন্তা আসে মাথায়। আর ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা ও বন্ধুদের সহযোগীতায় বানিয়ে ফেললেন হেলিকপ্টারটি।
আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া অজোপাড়া গাঁয়ে লেখাপড়া না জানা ছেলেরা কিভাবে এমন কাজটি করলেন এ নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই সাধারণ মানুষের। হেলিকপ্টার বানানোর খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পারলে প্রতিদিন দূর-দুরন্ত থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসেন হেলিকপ্টারটি এক নজর দেখার জন্য এবং সবার আগে স্মৃতির ফ্রেম বন্দি করে রাখতে।
জানা গেছে, হেলিকপ্টার তৈরিতে প্রায় সাত মাস সময় লেগেছে। এতে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হবে। প্রথমে শখের জন্য বানালেও এখন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হবে এটি। তিন বন্ধু মিলে হেলিকপ্টারটিতে ভ্রাম্যমাণ রেঁস্তোরা চালু করবেন বলে জানায় তারা।
কাজীর হাট বাজারের জব্বার প্যাদা বলেন, ‘প্রথমে আমরা সকলে বলেছি ও এতো কষ্ট করে টাকা উপার্জন করছে আর সেই টাকা দিয়ে কি তৈরি করছে এটি। টাকাগুলো তো নষ্ট করছে। পরে দেখি তিন বন্ধু একটি মূল হেলিকপ্টার বানিয়ে ফেলল।
দর্শনার্থীরা বলেন, ‘দেশের সর্বদক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীতেও হেলিকপ্টার বানানো হচ্ছে এটা অনেকটা অবিশ্বাস যোগ্য। দেখতে এসে বাস্তব চিত্র দেখলাম। তবে আশ্চর্য লাগল তিন বন্ধুর কেউ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোয়নি। অথচ তারা হুবহু হেলিকপ্টার তৈরি করে সারা ফেলেছে।’
উদ্যোক্তা মেহেদী হাসান বলেন, ছোট বেলা থেকেই ভিন্ন কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে। আর তা থেকেই উদ্যোগ নেই হেলিকপ্টার বানানোর। প্রথমে দেখে অনেকেই হাসাহাসি ও ঠাট্টা করতো যে আমি পাগল হয়ে গেছি। টাকা নষ্ট করে কি তৈরি করছি। এরপর অর্থের অভাবে বেশকিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। পরে আমার দুই বন্ধু আরিফ ও আল আমিনের সহায়তায় নিয়ে তিন বন্ধু মিলে বানিয়ে ফেললাম এই হেলিকপ্টার। তবে প্রথমে বানাতে চেয়েছিলাম প্লেন বা বিমান। পরে খরচ বেশি হবে এই ভেবে বিমান না বানিয়ে হেলিকপ্টার বানানো শুরু করলাম। বর্তমানে শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে।
মেহেদী আরো জানান, এটি তৈরিতে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। তাই হেলিকপ্টারে রেস্তোরাঁ দিয়ে ৬৪ জেলায় ঘুরতে চান।
তিন বন্ধু আরো জানালেন, সকল কিছুর ঊর্ধ্বে হচ্ছে ইচ্ছা শক্তি। যদি কারো সৎ ইচ্ছে থাকে তাহলে সব কিছু করা সম্ভব। তার এই প্রচেষ্টা দেখে বর্তমান সমাজের যুবকেরা আরো উদ্যোগী হয়ে নতুন কিছু করার উৎসাহী হবে এমনটাই আশা করছেন। সূত্র : নয়া দিগন্ত