শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২, ১১:২১:১১

অজপাড়াগাঁওয়ের ছেলের তৈরি উড়োজাহাজ দেখতে মানুষের ভীড়

অজপাড়াগাঁওয়ের ছেলের তৈরি উড়োজাহাজ দেখতে মানুষের ভীড়

এমটি নিউজ ডেস্ক : অজপাড়াগাঁওয়ে বড় হচ্ছেন এক প্রতিভাবান ছেলে ঝুটন সস্রাট যিশু। তার ছোট ছোট সৃষ্টি বেশ আলোড়ন জাগিয়েছে এলাকাজুড়ে। উড়োজাহাজ তৈরি করতে প্রয়োজন হয় হাজার কোটি টাকার। কিন্তু সুনামগঞ্জের দরিদ্র পরিবারের সন্তান মেধাবী কলেজছাত্র ঝুটন সস্রাট যিশু গুগল ও ইউটিউব দেখেই তৈরি করেছেন একটি মিনি উড়োজাহাজ। ঝুটনের সেই উড়োজাহাজ এখন প্রায়ই উড়ছে বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরপাড়ে। অজপাড়াগাঁওয়ের ছেলের তৈরি ছোট এই উড়োজাহাজটির ওড়াউড়ি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন মানুষ। 

বিশ^ম্ভরপুরের প্যারীনগর গ্রামের কৃষক গোপেন্দ্র চন্দ্র দাস ও ইলা রানী দাসের তিন সন্তানের মধ্যে ঝুটন দ্বিতীয়। ২০২০ সালে বিশ^ম্ভরপুর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাস করেন তিনি। 

বর্তমানে ঝুটন এলাকার দিগেন্দ্র বর্মণ সরকারি ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। শিক্ষকরা জানান, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই ঝুটন বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সেই সময় নিজের প্রচেষ্টায় ঝুটন একাধিকবার তৈরি করেছেন ড্রোনসহ নানা যন্ত্রপাতি। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও অর্থাভাবে এসব ড্রোন বেশি দিন সচল রাখতে পারেননি। এমনকি তৈরি করা যন্ত্রপাতি রাখার মতো কোনো নিরাপদ স্থানও নেই তাদের বাড়িতে। 

সম্প্রতি উপবৃত্তিসহ নিজের জমানো প্রায় ১১ হাজার টাকা ব্যয়ে এক মাস আগে ঝুটন ৩ ফুট লম্বা, ৪ ফুট ডানাবিশিষ্ট একটি উড়োজাহাজ তৈরি করেন। ককসিট দিয়ে তৈরি উড়োজাহাজটির মূল বডি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ট্রান্সমিটার, রিসিভার, লিপো ব্যাটারি, কন্ট্রোলিংয়ের জন্য চারটি সারভো মোটর, শক্তির জন্য ব্রাসলেস মোটর ও ছোট ফ্যান। একটি রিমোট দিয়ে সেটি আকাশে উড়ানো হচ্ছে। মিনি উড়োজাহাজটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে একাধারে আধাঘণ্টা উড়তে পারে।

তবে দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় নিজের তৈরি মিনি উড়োজাহাজটি রাখার মতো জায়গা নেই ঝুটনের ঘরে। অযত্নে ফেলে রাখা হয় রান্নাঘরের লাকড়ির স্তূপের ওপরে। তার কলেজের শিক্ষক, পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি- সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ঝুটন ভালো কিছু করার সুযোগ পেত। 

ঝুটন বলেন, এক মাস ধরে এটি আমি আকাশে উড়াচ্ছি। স্বপ্ন পূরণের অংশ হিসেবে এটি তৈরি করেছি। এটি দিয়ে কৃষিজমিতে সার-বীজ-কীটনাশক প্রয়োগের চেষ্টা করব। ভবিষ্যতে আমি হাওরের কৃষিকাজের জন্য ও আকাশে চড়া যায় এমন ছোট যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ তৈরি করতে চাই। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এসব কাজ করা সম্ভব না।

দিগেন্দ্র বর্মণ সরকারি ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মশিউর রহমান বলেন, মানবিক বিভাগের ছাত্র ঝুটনের উদ্ভাবনী শক্তি প্রশংসার দাবিদার। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীরা যেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় নষ্ট করে, সেখানে ঝুটন সৃষ্টিশীল কাজে মনোযোগ দিচ্ছে। তার উদ্ভাবনী কাজে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে বিশ^ম্ভরপুরের ইউএনও সাদি উর রহিম জাদিদ বললেন, মেধাবী ঝুটনের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির বিকাশে আমরা তাকে সহযোগিতা করব। তার মিনি উড়োজাহাজ তৈরির বিষয়টি আমরা জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানাব।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে