ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : জঙ্গিদের ব্যাকআপ টিমই শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানার কাছাকাছি স্থানের পুলিশি চেকপোস্টে হামলা চালায়। তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। একই সঙ্গে শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানার কাছাকাছি স্থানে কোথাও ওই ব্যাকআপ টিমের জঙ্গিরা অবস্থান নিয়েছিল। এমন ধারণা সিলেটের র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। ওইদিন ওখানে কেবল অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে পুলিশ কারা জঙ্গি সেটি চিহ্নিত করতে পারেনি।
তবে ঘটনার পরপরই শিববাড়ি জঙ্গি আস্তানার প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছিল। এই নজরদারিতে গতকাল পর্যন্ত কোনো তথ্য মিলেনি। সিলেটের শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা অভিযান শুরু করেছিল ২৫ মার্চ সকালে। ওইদিন সেনা সদস্যরা আতিয়া মহল থেকে জঙ্গিদের হাতে জিম্মি থাকা ৭৮ বাসিন্দাকে নিরাপদে বের করে নিয়ে আসে। এরপর থেকে সেনা সদস্যরা ওই বাড়িতে অভিযান শুরু করে। এর মধ্যে শিববাড়ির সব ক’টি প্রবেশমুখেই পুলিশি ব্যারিকেড দেয়া হয়।
ঘটনা ঘটে সন্ধ্যা ৭টা এবং সাড়ে ৭টায়। আতিয়া মহলে কেবল অভিযান চালাচ্ছিল সেনা সদস্যরা। আর পুলিশের কর্মকর্তারা ছিলেন বাইরে পরিস্থিতি মোকাবিলায়। পুলিশের পক্ষ থেকে সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের কদমতলী এলাকায় একটি চেকপোস্ট দেয়া হয়। ওই চেকপোস্টে সব ধরনের যানবাহন আটকে দেয়া হয়। আর তল্লাশি করে সাধারণ মানুষকে ভেতরে যেতে হয়েছিল। ওই চেকপোস্টের ভেতরে মাদ্রাসা রুটের কাছে ছিল আরেকটি চেকপোস্ট। ওদিকে পাঠানটুলা সড়কের মসজিদের কাছে ও ফেঞ্চুগঞ্জ রুটে রাজমহলের কাছে ছিল আরো একটি চেকপোস্ট।
এসব চেকপোস্ট দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও সাধারণ মানুষ অনায়াসেই যাতায়াত করেছে। ২৫শে মার্চ সন্ধ্যায় ওই এলাকায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিল। সেনা সদস্যরা এদিন প্রেস ব্রিফিং করেন পাঠানপাড়া এলাকার বাড়িতে। ওই ব্রিফিং থেকে যখন সাংবাদিকরা বের হচ্ছিলেন তখন মাদ্রাসার সামনেই সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘটে বিস্ফোরণ। এ সময় ঘটনাস্থলেই কেবল সাধারণ মানুষ ছিলেন। কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন না। ঘটনার পরপরই পুলিশ ও র্যাবের সিনিয়র কর্মকর্তারা ছুটে যান ওখানে। ছুটে যায় সিআইডির ক্রাইম সিনের কর্মকর্তারাও। তারা গিয়ে বোমা হামলাস্থলের পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে।
যখন প্রথম বোমা হামলার আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছিল তখন অন্ধকারের মধ্যে আরো একটি বোমা দেখতে পান পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা। তারা গিয়ে বোমাটি পরীক্ষা করতেই সেটির বিস্ফোরণ ঘটে। আর ওই সময় সেখানে অবস্থানরত র্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে মারা গেছেন সিলেট পুলিশের দুই ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলাম ও আবু কাওছার। র্যাব সূত্র জানায়, ওই দুর্ঘটনায় র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আজাদ গুরুতর আহত হন। এছাড়া র্যাবের আরো ছয় কর্মকর্তা গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে গতকাল তিনজন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন আর বাকি তিনজন এখনো চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও র্যাবের সিনিয়র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিববাড়ির ওই চেকপোস্টে দুই দফা বোমা হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরাই। আতিয়া মহলের ভেতরে যখন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছিল তখন জঙ্গিদের একটি ব্যাকআপ টিম সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এলাকায় তাদের আরো একটি আস্তানা থাকতে পারে। পর পর দুটি বোমা হামলার ঘটনার মামলা হয়েছে। তবে গতকাল বিকেল পর্যন্ত এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রযুক্তি নির্ভর তদন্তের পাশাপাশি সব ধরনের তদন্ত চালানো হচ্ছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রোকন উদ্দিন আহমদ গতকাল জানিয়েছেন, পরপর দুটি বোমা হামলার ঘটনার তদন্তে পুলিশের একটি দল কাজ করছে। আশা করি খুব শিগগিরই ফলাফল আসবে। তিনি বলেন, এলাকায় জঙ্গিদের একটি টিম থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। এছাড়া আর যাতে কোনো ধরনের ঘটনা না ঘটে সেদিকে পুলিশ সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে।
র্যাব-৯ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমদ জানিয়েছেন, পরপর দুটি বোমা হামলার ঘটনাটি র্যাবের পক্ষ থেকেও তদন্ত হচ্ছে। একজন এডিশনাল এসপির নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল অনুসন্ধানে রয়েছে। তিনি বলেন- জঙ্গিরা জনগণের সঙ্গে মিশে গিয়ে এই হামলা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা মিলেছে।
৩০ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস