বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ১০:৩৫:০৮

বৃদ্ধার গান শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন সংস্কৃতিমন্ত্রী

 বৃদ্ধার গান শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন সংস্কৃতিমন্ত্রী

সিলেট : নব্বই বছরের সুষমা দাস।  বাউল শিল্পী।  গ্রামের বাড়ি বাউল শাহ আব্দুল করিমের স্মৃতিবিজড়িত সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায়।  সেই শিল্পিীর প্রেমে পড়েছেন সাংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত উৎসবে প্রথমদিন সুষমা দাসের বাউল গান শোনেন সংস্কৃতিমন্ত্রী।  এরপর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি।  ভালো লাগার অনুভূতি প্রকাশ করেন অকপটে।

করিমের জন্মভূমি দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের উজান ধলের পার্শ্ববর্তী পেরুয়া গ্রামের ওই নারীর গান শুনে শুধু মন্ত্রীই নন উপস্থিত হাজারো দর্শকের চোখে জল এসে যায়।

গত বুধবার দিবাগত রাতে তিন দিনব্যাপী করিম উৎসব উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।  এরপর সুষমা দাশকে মঞ্চে আনা হয়। বৃদ্ধা নারীকে দেখে অনেকের ধারণা ছিল, মূলত সম্মান জানানোর জন্যই মঞ্চে হাজির করা হয়েছে তাকে।

কিন্তু দরাজ গলায় বৃদ্ধার টানে পিনপতন নীরবতা।  নব্বই বছরের বৃদ্ধা কণ্ঠ বন্ধ করলে হাততালিতে ফেটে পড়ে দর্শকরা।  মঞ্চে উপস্থিত হওয়ার জন্য সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে আহ্বান জানান উপস্থাপক।  

কিন্তু মন্ত্রী মঞ্চে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন।  উল্টো তিনি ওই নারীকে আরো একটি গান পরিবেশনের জন্য অনুরোধ করেন।  এ সময় উপস্থিত দর্শকরাও করতালি দিয়ে মন্ত্রীর অনুরোধকে স্বাগত জানান।

মন্ত্রীর অনুরোধে বৃদ্ধা আরেকটি গান পরিবেশন করেন।  গানটি ছিল, ‘এখন ভাবিলে কি অইবগো, যা হবার তা হয়ে গেছে’।

এরপর মঞ্চে উঠেন মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।  উঠেই সুষমা দাশকে কদমবুচি করে সম্মান জানান।  বাউল শিল্পীকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এ সময় সুষমা ও উপস্থিত অনেকেরই চোখে জল এসে যায়।

আবেগে আপ্লুত মন্ত্রী মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলেন, আমি মুগ্ধ, অভিভূত! আমি তার সাধনার প্রতি মাথানত করে শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন জানাই।
এরপর মন্ত্রী সুষমাকে ধরে মঞ্চ থেকে নামতে সাহায্য করেন।  তিনি বারবার জানতে চান তার চাওয়ার কিছু আছে কি না।  কিন্তু শিল্পী তার গাওয়া গান রেকর্ড করা ছাড়া আর কিছুই চাইলেন না।

মন্ত্রী আয়োজকদের বলেন, চলতি মাসের মধ্যে সুষমা দাশকে নিয়ে ঢাকায় আসতে।  আর্থিক সহায়তার জন্য একটি দরখাস্ত শিগগিরই তার কাছে জমা দিতেও বলেন।

সুষমার গান শোনার পর রাত পোহাতেই সুষমার খোঁজে ছুটে যান সিলেট নগরীর হাওয়ালদার পাড়ায়।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক সংগঠক রজতকান্তি গুপ্ত, কবি ও গবেষক সুমনকুমার দাশকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় মন্ত্রী সিলেট সার্কিট হাউস থেকে সুষমা দাশের বাসায় আকস্মিকভাবে উপস্থিত হন।

মন্ত্রীকে দেখে সুষমার পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।  মন্ত্রীকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে যান তিনি।  এসময় সুষমার সন্তান শংকর দাস, প্রবীর রঞ্জন দাস, প্রশান্ত দাস, মেয়ে কনকা দাস, পুত্রবধূ দিপীকা রানী দাসও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।  তাড়াহুড়ো করে মন্ত্রীকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন।

এ সময় মন্ত্রী সুষমা দাসের সংগীত সাধনা ও শিল্পীর সংগীত জীবনের খোঁজখবর নেন।  শিল্পীর একান্ত ইচ্ছানুযায়ী তার পছন্দের গান সংরক্ষণের জন্য তাকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানান।

তিনি সুষমার শারীরিক অবস্থারও খোঁজ-খবর নেন এবং তার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।  মন্ত্রীর আলাপচারিতার পর সুষমা দাশের ছোট মেয়ে নিবেদিতা দাস রিন্তী মায়ের লেখা ও সুর করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে রচিত গান পরিবেশন করেন।

উল্লেখ্য, সুষমা দাশ সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার পেরুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  তার বাবা রশিক লাল দাসও গান লিখতেন।  সুষমা অজস্র হরি জাগরণের গান, গোপীকা কীর্তন, ঘাটু গান, ধামাইল গান, বিয়ের গান, হরিগান, কবি গান ও বাউল গান গেয়েছেন।  সুষমা দাস দলীয় গান থেকে একক শিল্পী, বেতার থেকে স্টেজে গান গেয়েছেন।

সুষমা দাশ বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, ঢাকার ছায়ানট, রমনার বটমূলে বিভিন্ন সময়ে গান পরিবেশন করেন।  ভারতের সংগীত গবেষক মৌসুমী ভৌমিকের আমন্ত্রণে এককভাবে রাধারমন দত্তের গান পরিবেশন করেন।  ভারতের যাদবপুর ইউনিভার্সিটির অধ্যক্ষের আমন্ত্রণে ইউনিভার্সিটির অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন তিনি।

একজন সহজ-সরলমনা সুষমা দাশ।  বর্তমানে সিলেটের সবচেয়ে প্রবীণ সংগীত শিল্পী হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে যাচ্ছেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে