বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৯:০০:০৪

অবশেষে জনপ্রতিনিধির নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন

 অবশেষে জনপ্রতিনিধির নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন

রাহিব ফয়ছল, সিলেট প্রতিনিধি: অবশেষে গত দেড় বছরে প্যানেল মেয়র (১) রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর উপর কাউন্সিলরদের উপর অনাস্তা প্রস্তাব, মেয়রের অনুপস্থিতিতে জৈষ্টতার ক্রমানুসারে মেয়রের দায়িত্ব প্রদান ও সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব প্রদান নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হচ্ছে।

এসব বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতে তিনটি পৃথক রীট পিটিশন থাকায় নির্বাচিত মেয়র (সাময়িক বরখাস্তকৃত) আরিফুল হক চৌধুরীর অনুপস্তিতিতে মেয়রের দ্বায়িত্ব পালন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় মন্ত্রণারয় কর্তৃক সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিবকে আর্থিক ও প্রশাসনিক দ্বায়িত্ব প্রদান করায় কার্যত জনপ্রতিনিধির প্রতিনিধিত্বশূণ্য হয়ে পড়ে নগরবাসীর সেবাদানকারী এই প্রতিষ্ঠানটি।

গত বছরের ২৪ এপ্রিল এসব বিষয় নিয়ে দায়েরকৃত পৃথক রীট সমূহের রায় প্রদান করেন উচ্চ আদালত। কিন্তু রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত না হওয়ায় বিষয়টির সূরাহা হচ্ছিলনা। অবশেষে রায়টি প্রকাশিত হওয়ার এখন জনপ্রতিনিধির হাতে সিসিকের যাবতীয় কার্যক্রম ফিরে যাওয়ার রাস্তা প্রসারিত হয়েছে।

বৃহষ্পতিবার রীট পিটিশন সমূহের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সিসিকের প্যানের মেয়র (১) ও ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিরর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। জনাকীর্ণ এই সংবাদ সম্মেলনে রায়ের ব্যাখ্যা দেন কয়েস লোদীর নিযুক্ত আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট মোস্তাক আহমদ চৌধুরী।

মোস্তাক আহমদ চৌধুরী জানান, সিসিক’র প্যানেল মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদী এবং প্যানেল মেয়র-২ সালেহ আহমদ চৌধুরীর দায়েরকৃত দুটি রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ যে রায় দিয়েছেন, তার প্রেক্ষিতে ১৫ দিনের মধ্যে নির্ধারিত হবে কে হচ্ছেন সিসিক’র ভারপ্রাপ্ত মেয়র।

তিনি বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর দায়েরকৃত রিট পিটিশন নং ১১৯২৫/২০১৪ এবং প্যানেল মেয়র-২ সালেহ আহমদ চৌধুরীর দায়েরকৃত রিট পিটিশন নং ৩৬৫/২০১৫ একত্রে শুনানি শেষে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৬ মে যে রায় প্রদান করেন, সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি গত ২২ ফেব্রুয়ারি আমরা হাতে পেয়েছি।

এই আউনজীবী বলেন, বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম কর্তৃক দেয়া রায়ে গুরুত্বপূর্ণ ৮টি পয়েন্ট রয়েছে। রায়ের কপির ১৫নং পেইজে বলা হয়েছে- ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য লোদীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল। তবে প্যানেল মেয়র লোদী যেহেতু কখনো মেয়রের দায়িত্ব পালন করেননি, সেহেতু তার ক্ষমতা অপব্যবহারের সুযোগই ছিল না। অধিকন্তু, কাউন্সিলর হিসেবেও ক্ষমতা অপব্যবহারের কোন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে নেই। রায়ের ১৬নং পেইজে বলা হয়েছে- লোদীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোনো তদন্ত হয়নি এবং কারণ দর্শানোর নোটিশও জারি করা হয়নি।

তিনি বলেন, প্রদত্ত রায়ের ১৬নং পেইজে আরো বলা হয়েছে- কয়েস লোদীর প্যানেল মেয়র পদবী ব্যবহারে আইনে কোনো বাধা নেই। অধিকন্তু, প্যানেল মেয়র পদবী আইনেরই সৃষ্টি। রায়ের ১৯নং পেইজে বলা হয়েছে- প্যানেল মেয়র কয়েস লোদীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান আইনের ১৪ ধারা অনুসরণ করা হয়নি।

এডভোকেট মোস্তাক আরো বলেন, যে রেজুলেশনে কয়েস লোদীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়, সেই রেজুলেশন বিদ্যমান আইনের ৫৭ ধারা অনুসারে ১৪ দিনের মধ্যে অনুমোদন করতে হবে। কিন্তু ২০১৪ সালের ১০ জুন গৃহিত রেজুলেশনটি ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর অনুমোদন করা হয়। রিট চলাকালে এই অনুমোদনকে আদালত ভৎসর্না করে এটিকে আইনের প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।

এডভোকেট মোস্তাক বলেন, প্রদত্ত রায়ের ২১ ও ২২নং পেইজে বলা হয়েছে- বিদ্যমান আইনের ২০ ও ২১ নং ধারা অনুসারে প্যানেল মেয়র-১ অনিচ্ছা প্রকাশ না করলে প্যানেল মেয়র-২ ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। সুতরাং, সিসিক’র মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর যে আদেশবলে প্যানেল মেয়র-২ কে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেন, তা ঠিক হয়নি। কারণ তা আইনানুগ নয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে কয়েস লোদীর আইনজীবী আরো বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের ২২নং পেইজে বলা হয়েছে- বিদ্যমান আইনের ১০৭ ধারা অনুসারে সিটি করপোরেশনের যে কোনো কার্যধারা বাতিলের ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। যদিও এটি আপিলের বিধান নয়, তথাপি রিট আবেদনকারী বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য আবেদন করতে পারেন। আদালত উপরোক্ত অভিমত সমূহ ব্যক্ত করে বিষয়টির উপর ১৫ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রদানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং তদু পর্যন্ত সিসিক’র প্রধান নির্বাহীকে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের আদেশ দিয়েছেন।

পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আগামী ২৯ ফেব্রুুয়ারি নাগাদ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পৌঁছবে জানিয়েছে এডভোকেট মোস্তাক জানান, এরপর থেকেই আদালতের আদেশকৃত ১৫ দিন শুরু হবে। এসময়ের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়টি নিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/ এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে