ওয়েছ খছরু: ‘লন্ডনি বধূ’ রুমেনা লাপাত্তা। রশিদ ওরফে ল্যাংড়া রশিদেরও কোনো খোঁজ নেই। রুমেনার ভাইয়ের অপহরণ মামলার প্রধান আসামি সে। রুমেনা কাহিনীর মূল হোতা রশিদকে গ্রেপ্তারে পুলিশ মৌলভীবাজারসহ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েছে। রুমেনার পরিবার দাবি করেছে, রুমেনাকে অপহরণের পর এখন বশে এনে রশিদই তাকে দিয়ে যা তা বকাচ্ছে। তবে রুমেনা আদালতে ২২ ধারার যে জবানবন্দি দিয়েছে সেখানে সে কৌশলী বক্তব্য দিয়েছে। ওই বক্তব্যে রশিদের পিতা ছালিক মোল্লাকে তার নিকট আত্মীয় বললেও ঘুণাক্ষরে রশিদের নাম উল্লেখ করেনি। এমনকি কারাগারে থাকা নুরুল আমীনের নামও কৌশলে এড়িয়ে যায়। প্রায় ২৪ দিন আগে লন্ডন থেকে বাড়ি ফেরার পথে ৬ই জুন ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অপহৃত হয় লন্ডনি বধূ রুমেনা বেগম। রুমেনার স্বামী আজাদ মিয়া দুই সন্তান রেদুয়ান ও রায়হানকে নিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন। রুমেনার ছেলে শিশু রায়হানের বয়স সাড়ে ৩ বছর। মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য বেড়াতে এসে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অপহৃত হন তিনি।
অপহৃত হওয়ার পর রুমেনার ভাই রফিকুল ইসলাম সিলেটের বিমানবন্দর থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় ভিকটিম রুমেনা আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে আটক হয়। ৭ দিন ছিল সিলেটের বাগবাড়িস্থ ‘সেফহোমে’। এরপর নিজ জিম্মায় চলে যায় রুমেনা। মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিজ জিম্মায় চলে গেলেও রুমেনা এখন স্বামী কিংবা পিতার ঘরে আসেনি। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর ল্যাঙ্গা রশিদ তাকে জোরপূর্বক নিয়ে গেছে। এদিকে, অপহরণ মামলার প্রধান আসামি রশিদের বাড়ি সম্পর্কে ইতিমধ্যে খোঁজ-খবর পেয়েছে রুমেনার পরিবার। তারা জানিয়েছেন, রশিদের বাড়ি বিশ্বনাথের দুর্যাকাপন গ্রামে। ভুল করে মামলার এজাহারে চানশীর কাপন লেখা হয়েছে। রশিদের পুরো নাম আবদুর রশিদ নোমান। কিন্তু মামলার এজাহারে রশিদ ওরপে ল্যাংড়া রশিদ লেখা হয়েছে।
প্রায় বছর খানেক আগে রশিদ মালয়েশিয়া যায়। সেখানে প্রায় ৩ মাস অবস্থান করে চলে আসে সিলেটে। এর আগে সে ট্রাক চালাতো। রশিদের পিতা ছালিক মিয়াও পেশায় একজন ট্রাকচালক। তার বড় ভাই আবদুল মুমিনও ট্রাকচালক। রুমেনার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ ছিল রশিদের। ওই সময় রশিদ রুমেনার কাছে নিজেকে বিবাহিত বলে দাবি করেছিল। আর এ বিষয়টি সত্যতা মিলেছে এলাকায়ও। দুর্যাকাপন গ্রামের অধিবাসীরা জানিয়েছেন, রশিদ মালয়েশিয়া থেকে আসার পর ফেসবুকের মাধ্যমে এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। পরে ওই মেয়েকে নিয়ে চলে যায় মৌলভীবাজারে। সেখানে গিয়ে মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন বসবাস করে। এরপর তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হলে মেয়েটি পিত্রালয়ে চলে যায়। আর আসেনি। ওই সময় রশিদের বিরুদ্ধে থানায় নালিশ দায়ের করা হয়।
এদিকে, অপহরণে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করতে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। বিমানবন্দর থানার ওসি গৌছুল আলম জানিয়েছেন, পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। তাদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হবে জানান তিনি। এছাড়া পুলিশ আলোচিত এ মামলার তদন্তও প্রায় শেষ করে রেখেছে বলে জানান। এদিকে, লন্ডনে বসবাসকারী আজাদ মিয়া জানিয়েছেন, দুই সন্তান মা রুমেনার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। তারা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চায়। কথা বলতে চায়। তিনি বলেন, এখন দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি রীতিমত বেকায়দায় পড়েছেন।
ওদিকে, সম্প্রতি কয়েকটি অপরিচিত মোবাইল ফোন থেকে আজাদের আত্মীয়-স্বজনদের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। তারা বলেন, হুমকি দেয়া হচ্ছে রশিদের পক্ষ থেকে। বিষয়টি তারা বিশ্বনাথ থানাকে অবগত করেছেন বলে জানিয়েছেন আজাদের ভাই মতিন মিয়া। সম্প্রতি লন্ডনে থাকা আজাদের ফেসবুকে রুমেনার আইডি থেকে কিছু ছবি পাঠানো হয়েছে। এসব ছবিতে রশিদ নামের ওই যুবকের সঙ্গে রুমেনা বসে কফি খাচ্ছে, আবার কখনো কাজিরবাজার ব্রিজে বসে আড্ডা দিচ্ছে বলে দেখা যায়।-এমজমিন
২ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ