রবিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৮, ০৯:৪৭:৫৫

ঠাকুরগাঁওয়ে কে জিতবে, ফখরুল নাকি রমেশ?

ঠাকুরগাঁওয়ে কে জিতবে, ফখরুল নাকি রমেশ?

ঠাকুরগাঁও : অবশেষে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই হেভিওয়েট প্রার্থীকে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে ভোট যুদ্ধে অংশগ্রহণে ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করেছে দলের হাইকমান্ড।

হেভিওয়েট প্রার্থীর একজন হলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন আর অন্যজন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

স্বাধীনতার পর থেকে ঠাকুরগাঁও-১ আসন আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের দখলে থাকলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে আসনটি হাতছাড়া হয়। এরপর ২০০৮ থেকে এই আসনটি আবারো আওয়ামী লীগের দখলে চলে আসে।

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় রমেশ চন্দ্র সেন মরিয়া আওয়ামী লীগ। অপরদিকে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চান মির্জা ফখরুল।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: ১৯৮৪ সালে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলাকে ভেঙে তিনটি জেলা করা হয়। এর মধ্যে পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের মাঝখানে ঠাকুরগাঁও জেলা। এ জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ। আয়তন প্রায় ১ হাজার ৬০০ বর্গমাইল। জেলায় মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৫ ভাগ মুসলমান, হিন্দু শতকরা ২৪ ভাগ এবং খ্রিস্টান, আদিবাসী ও অন্যান্য জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার শতকরা এক ভাগ।

ঠাকুরগাঁও-১ আসন: সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ২১ হাজার ৬২২ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ১০ হাজার ৯৬ জন পুরুষ ২ লাখ ১১ হাজার ৫২৬ জন।

নিবার্চনী পরিসংখ্যান: ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রমেশ চন্দ্রসে ন নৌকা প্রতীক নিয়ে ৫৬ হাজার ৬৯০ ভোটের ব্যাবধানে মির্জা ফখরুলকে (ধানের শীষ) পরাজিত করেন। নৌকা পায় ১ লাখ ৭৭ হাজার ১০১ ভোট ধানের শীষ পায় ১ লাখ ২০ হাজার ৪১১ ভোট।

এর আগে ২০০১ সালে ৮ম সংসদ নির্বাচনে মির্জা ফখরুল ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ৩৭ হাজার ৯৬২ ভোটে ব্যাবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রমেশ চন্দ্র সেনকে হারান। ধানের শীষ পায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯১০ ভোট আর নৌকা পায় ৯৬ হাজার ৯৪৮ ভোট। এককভাবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নূরে আলম চৌধুরী ১৬ হাজার ৬৪৭ ভোট।

১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে খাদেমুল ইসলাম পান ৬২ হাজার ৭০৯ ভোট। বিএনপি মির্জা ফখরুল ধানের র্শীষ প্রতীক নিয়ে পান ৫৮ হাজার ৩৬৯ ভোট। ভোটের ব্যবধান ৪ হাজার ৩৪০ ভোট । আলাদা নির্বাচন করে জামায়াতের রফিকুল ইসলাম পান ১৭ হাজার ২৪২ ভোট । তবে জামায়াতের সঙ্গে একত্রে হিসাব করলে আরও ১৪ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকেন মির্জা ফখরুল।

১৯৯১ সালে ৫ম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে খাদেমুল ইসলাম পান ৫৭ হাজার ৫৩৫ ভোট। বিএনপি মির্জা ফখরুল ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পান ৩৬ হাজার ৪০৬ ভোট। ভোটের ব্যবধান ২১ হাজার ১২৯ ভোট। তবে আলাদাভাবে নির্বাচন করে জামায়াত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম পান ২৬ হাজার ৮০০ ভোট। আর জাতীয় পার্টি প্রার্থী রেওয়ানুল হক ইদু চৌধুরী পান ২১ হাজার ৫০ ভোট।

বর্তমান সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন জানান, তিনি দীর্ঘদিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তৃতীয়বারের মতো এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিগত সময়ে পানি সম্পদমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত তিনি জনগণ ও দেশের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছেন। বিশেষ করে ঠাকুরগাঁওয়ে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা, মন্দির-মসজিদ স্থাপনসহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন, যা দৃশ্যমান।

তিনি দাবি করেন, অন্য কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এলাকায় এতো উন্নয়ন কাজ হয়নি। এসব কাজের সুফল এ জেলার মানুষ ভোগ করছে। সব দিক বিবেচনা করলে দেখা যাবে প্রধানমন্ত্রীর ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যকে তিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি, চিকিৎসা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁওকে একটি মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তোলাসহ বর্তমান সরকারের অসমাপ্ত সব কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগের কিছু রিজার্ভ ভোট রয়েছে, যা আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ব্যক্তিগত জীবনে আমার আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, সারা জীবন মানুষের সেবা করেছি, আগামীতেও সেবা করে যেতে চাই।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলকে সুসংগঠিত করে রেখেছেন। বর্তমানে দলে কোনো বিভেদ নেই। দলকে পুনর্বিন্যাস, দলীয় বিভিন্ন সভাসহ বিগত দিনের ছোটখাটো কিছু ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি অনুযায়ী, ঠাকুরগাঁও সদর আসনে বিএনপি আগের তুলনায় অনেক বেশি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী। এর প্রমাণ মেলে পৌরসভা ও সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে। দুটি নির্বাচনেই বিএনপি প্রার্থী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছে।

মূলত আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলের কারণে এমনটা হলেও নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম একাধিকবার এলাকায় আসেন। তার এ আগমনই বিএনপি প্রার্থীর জয়ে ভূমিকা রেখেছে।

জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর রহমান বলেন, বিএনপি একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল। এখানে সব কিছুই নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে চলে। দলের বিভিন্ন পদের নেতাকর্মীরা জ্যেষ্ঠ নেতাদের কথার বাইরে যায় না। নেতাকর্মীরা একে-অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

তিনি বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ঠাকুরগাঁওয়ের কৃতি সন্তান। তিনি একসময় জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ জেলার মানুষ তাকে অনেক সম্মান করে ও ভালোবাসে। তাই এ আসনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনিই বিএনপির একমাত্র যোগ্য প্রার্থী। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তবে বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে