নিউজ ডেস্ক: ওরা নিরাপত্তার আশায় ছুটছে হাজারে হাজারে। উত্তর-পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমরা পালাচ্ছে। অনেকেই আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কয়েকজন বর্ণনা করেছেন তাঁদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়নের কথা। চোখের সামনেই বাড়িঘর পুড়তে দেখেছেন তাঁরা। হত্যা করা হয়েছে পরিবারের সদস্যদের। রোহিঙ্গা নারী লালু বেগম বললেন, ‘তারা (সেনাসদস্যরা) ১০ বছরের বেশি বয়সী কোনো ছেলেকে পেলেই হত্যা করছে। পুরুষদের অনেককে ধরে নিয়ে যায়। সেনারা এলে আমরা বাড়ি ছেড়ে পালাই। জানি না আমার স্বামী বেঁচে আছেন, নাকি মৃত।’
লালু বেগম এখন বাংলাদেশের কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে আছেন। তিনি বললেন, তাঁর গ্রামের অনেক নারী সেনাবাহিনীর সদস্যদের নির্যাতনে শিকার হয়েছেন। রাখাইনে আনুমানিক ১০ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। মিয়ানমারের সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। অথচ বহু রোহিঙ্গা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাস করছে দেশটিতে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার বাংলাদেশ শাখার কর্মকর্তা জন ম্যাককিসিক বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তারা জাতিগত নির্মূলের লক্ষ্যে অভিযান শুরু করেছে।
মিয়ানমারের সরকার অবশ্য রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, সেনাবাহিনী সেখানে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান চালিয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, সহিংস হামলাকারীরা গত ৯ অক্টোবর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নয় সদস্যকে হত্যা করেছে। সেই থেকে এ পর্যন্ত সরকারি অভিযানে অন্তত ১০০ মানুষ নিহত ও প্রায় ৬০০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী রোহিঙ্গাদের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, গ্রামেরই কিছু লোক এসব হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ী।
লালু বেগম বলছেন, সরকার ঠিকমতো ব্যবস্থা নেয়নি বলেই তাঁরা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁদের গ্রামে আর কোনো রোহিঙ্গা মুসলিম অবশিষ্ট নেই। সবাই পালিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই, অন্তত সহিংসতার অবসান না হওয়া পর্যন্ত। জীবন বাঁচাতে সবকিছু ছেড়ে তাঁরা চলে এসেছেন। তাঁদের মনে আশঙ্কা, ফিরে গেলেই ‘ওরা’ মেরে ফেলবে।-প্রথম আলো
২৬ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ