রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৯:৫৭:০৯

মোকাবিলা করতে সীমান্তজুড়ে দ্রুত রাস্তা তৈরি শুরু

মোকাবিলা করতে সীমান্তজুড়ে দ্রুত রাস্তা তৈরি শুরু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সীমান্ত নীতিতে বেশ নীরবেই বড়সড় পরিবর্তন করে ফেলেছে ভারত। ভুটান সীমান্তের ডোকলামে চীনের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হওয়ার মতো পরিস্থিতি আর চায় না নয়াদিল্লি। সীমান্তে ওই ধরনের সমস্যা তৈরি হলে যাতে আরো দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে ভারতীয় বাহিনী, তা নিশ্চিত করতে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ খুব দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে রাস্তা তৈরির দায়িত্বে থাকা সংস্থা বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন-এর (বিআরও) জন্য তাই অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বরাদ্দ। ২০২১ সালের মধ্যে ভারত-চিন সীমান্তে যতগুলি রাস্তা তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, আগামী দু’বছরের মধ্যে সেগুলির কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে এ বার ময়দানে নেমেছে বিআরও।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, ভারত-চীন সীমান্তের ১০০ শতাংশ এলাকার সঙ্গে ভারতের বাকি অংশের সড়ক যোগাযোগ মসৃণ করে তুলতে মোট ৬১টি রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এই ৬১টির মধ্যে অন্তত ৫৮টি রাস্তা তৈরির কাজ ২০২১ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু সম্প্রতি ডোকলামের সঙ্কট থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে ভারত সরকার নির্দেশ দিয়েছে, ২০২১ নয়, ২০১৯ সালের মধ্যেই শেষ করতে হবে রাস্তাগুলো তৈরির কাজ। সেই নির্দেশ এবং বর্ধিত বরাদ্দ পেয়েই কাজের গতি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বিআরও।

ভারত-চীন সীমান্তে রাস্তা তৈরির কাজের গতি অবশ্য গত কয়েক বছর ধরেই বাড়ছিল। ভারত এবং চীনের সীমান্ত যে অঞ্চলে, তার প্রায় পুরোটাই পার্বত্য এলাকা বা অরণ্যাবৃত। ওই সব এলাকায় রাস্তা তৈরিকে দু’টি পর্বে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্বের নাম ‘ফর্মেশন কাটিং’। এই পর্বে রাস্তা তৈরির জায়গা বানানো হয়। দ্বিতীয় পর্বের নাম ‘সারফেসিং’।

রাস্তা তৈরির জন্য যে জায়গা বানানো হয়েছে, দ্বিতীয় পর্বে সেই জায়গার উপর দিয়ে অ্যাসফল্টের চাদর বিছিয়ে দেয়া হয়। গত কয়েক বছরে এই ফর্মেশন কাটিং এবং সারফেসিং-এর গতি অনেক বেড়েছে বলে খবর। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে ফর্মেশন কাটিং-এর বার্ষিক গতি ছিল ১০৭ কিলোমিটার। ২০১৬-১৭-তে তা বেড়ে হয়েছে ১৪৭ কিলোমিটার। একই ভাবে, সারফেসিং-এর বার্ষিক গতিও ১৭৪ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ২৩৩ কিলোমিটার হয়েছে। কেন্দ্রের কাছ থেকে নতুন নির্দেশ পাওয়ার পর এই গতি আরও বাড়ানো হচ্ছে।

ভারত-চীন সীমান্তে মোট ৩৪০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হওয়ার কথা। এই মুহূর্তে মাত্র ২৭০ কিলোমিটার-এর ফর্মেশন কাটিং বাকি রয়েছে বলে খবর। অর্থাৎ ৩১০০ কিলোমিটারেরও বেশি ফর্মেশন কাটিং হয়ে গিয়েছে। ৬১টি রাস্তার মধ্যে ২৭-টির তৈরির কাজ পুরোপুরি শেষ। ৩৪টির কাজ চলছে।

বিআরও সূত্রের খবর, ফর্মেশন কাটিং-এর কাজ বেশিরভাগটাই হয়ে যাওয়ায় এখন দু’প্রান্ত থেকেই সারফেসিং-এর কাজ শুরু করা যাবে। কাজের গতি যে ভাবে বাড়ানো হচ্ছে, তাতে সারফেসিং শেষ করতে খুব বেশি সময়ও লাগবে না। ২৭০ কিলোমিটারের ফর্মেশন কাটিং-ও দ্রুতই শেষ হবে। তাই বছর দু’য়েকের মধ্যে ভারত-চীন সীমান্তের প্রায় ১০০ শতাংশ এলাকাকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে মসৃণ সড়কের মাধ্যমে জুড়ে ফেলতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে বিআরও কর্তারা মনে করছেন।

ডোকলামে ভারত খুব দ্রুত সেনা পাঠাতে পেরেছিল, কারণ ওই অঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ খুব মৃসণ। শুধু সেনা পাঠানো নয়, রসদ সরবরাহও চলছিল বেশ মসৃণ ভাবেই। কিন্তু ভারত-চীন সীমান্তের সব এলাকার সঙ্গে ভারতের সড়ক যোগাযোগ এতটা মসৃণ নয়।

ডোকলামের মতো ঘটনা সীমান্তের অন্য কোনো অঞ্চলে ঘটলে, ভারত সেখানে এত দ্রুত সেনা পাঠাতে এবং রসদ সরবরাহ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই দ্রুত রাস্তা তৈরির কাজ শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ডোকলামে ভারত যেমন সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল, সীমান্তের অন্য এলাকাগুলোতেও যাতে তেমনই মসৃণ যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব দ্রুত গড়ে তোলা যায়, বিআরও এখন সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে।


চীন–পাকিস্তানকে নিয়ে ভয় নেই :‌ রাওয়াত

অযাচিত মন্তব্য করে পড়শি দেশের সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সময় থাকতে তাই সামলে নিলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। চীন ও পাকিস্তানকে নিয়ে ভারতের কোনো ভয় নেই বলে জানিয়ে দিলেন। একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন গিয়েছিলেন। সেখানেই এমন মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, ‘‌চীন বা পাকিস্তান, দুই দেশের একটিকে নিয়েও ভয় নেই।’‌

চার দিন আগেই অবশ্য আক্রমণাত্মক সুর ধরা পড়েছিল তার গলায়। টানা ৭২ দিন ধরে টানাপোড়েনের পর ডোকা লা নিয়ে সবে শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ করেছিল ভারত ও চীন। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিকিম সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশ। তারপর গত সপ্তাহে ব্রিকস সম্মেলনের শেষ দিনে ‌শান্তি, পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নতির বার্তা দেন দুই দেশের রাষ্ট্রনেতা নরেন্দ্র মোদি ও শি জিনিপিং। কিন্তু তার দু’‌দিন পরই বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন ভারতের সেনাপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘‌যেকোনো মুহূর্তে ডোকা লামের পুনরাবৃত্তি হতেই পারে। চীনের সঙ্গে ভারতের সঙ্ঘাতের সুযোগ নিতে পারে পাকিস্তানও। আচমকা আক্রমণ করতে পারে তারা। দেশের উত্তর ও পশ্চিম— দুই প্রান্তেই ইতিমধ্যে এলাকা দখল শুরু হয়েছে। তবে আমরাও প্রস্তুত। কাশ্মীরে শান্তি স্থাপন এবহং সেখানকার স্থিতিশীলতা রক্ষাই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রয়োজনে ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালাতেও আপত্তি নেই।’‌

ব্রিকস সম্মেলনের পর দিনই এমন মন্তব্য করায় তার ওপর চটে ওঠে বেইজিং। তাদের সরকারি মুখপাত্র জেঙ শুয়াঙ বলেন, ‘‌দু’‌দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রেসিডেন্ট জিনপিং। বিরোধ ভুলে শান্তি ও উন্নয়নে জোর দেয়ার কথা বলেছেন। তাসত্ত্বেও এমন মন্তব্য মেনে নেওয়া যায় না। দিল্লির মদতে উনি এমন মন্তব্য করেছেন না নিজেকে হামবড়া ভেবে হাবিজাবি বকেছেন তা জানা নেই।’‌
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে