আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সীমান্ত পেরিয়ে মানুষের মিছিল। বয়স্করা স্মৃতি হাতড়ে জানাচ্ছেন, ১৯৪৭ আর ১৯৭১-এ এমনটা তাঁরা দেখেছেন। একটা দেশভাগের সময়ে আর একটা মুক্তিযুদ্ধের কালে।
বিপন্ন মানুষকে এ ভাবে দল দলে একদেশের সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশে প্রবেশ করতে এই দুই সংকট ছাড়া বড় একটা দেখা যায়নি ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে। বংলাদেশের চট্টগ্রামের টেকনাফ জনপদটি এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের আশ্রয়স্থল। মায়ানমার থেকে প্রবল বিপদ মাথায় নিয়ে নারী, শিশু ও বয়স্ক পরিজন-সহ হাজার হাজার মানুষ শুধু বাঁচতে চাইছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে উত্তাল। এথনিক নৃশংসতার এই উদাহরণে সারা পৃথিবী জুড়়েই মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে সরব রাজনৈতিক নেতা থেকে সাধারণ মানুষ। ধর্মীয় একদেশদর্শিতা কতটা তুঙ্গে পৌঁছলে মানুষ এতটা অমানবিক হতে পারে, তার সাক্ষ্য বহন করছে অসংখ্য রোহিঙ্গা শিশুর মৃতদেহের ফোটোগ্রাফ, অগণিত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের পুড়ে যাওয়া দেহ। অজস্র ধিক্কার আর সমালোচনার সামনেও নির্বিকার মায়ানমারের সু চি সরকার। বিশ্ব শান্তি বিষয়ে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তা এই নেত্রীর মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানুষ।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার এই বাহাসে কি রোহিঙ্গাদের কিছু এসে যায়? এই মুহূর্তে তাঁদের একটাই লক্ষ্য- বেঁচে থাকা। টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে এখনও পর্যন্ত যথাযথ বিলি ব্যবস্থা নেই ত্রাণের। ওদিকে রিফিউজি ক্যাম্পের পরিবেশও প্রতিদিনই একটু একটু করে ভয়াবহ হয়ে পড়ছে।
কোনও মতে বেঁচে সীমানা পেরলেও শেষ পর্যন্ত কতজন রোহিঙ্গা তাঁদের পুরো পরিবারকে অটুট রাখতে পারবেন, তা নিয়ে উদ্বেগ এখন তাঁদের নিত্যসঙ্গী। এমতাবস্থায় ফেসবুক-টুইটারের জগত্ থেকে বহু দূরে ১৮ জন মানুষ নীরবেই নেমে পড়েছেন ত্রাণকার্যে। এঁরা যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক মানবতাবাদী সংগঠন খালসা এইড ইন্টারন্যাশনালের স্বেচ্ছাসেবক। টেকনাফে পৌঁছে এঁরা শুরু করে দিয়েছেন এঁদের কাজ।
স্বেচ্ছাসেবী দলের প্রধান অমরপ্রীত সিংহ খালসা এইড-এর ভারতীয় শাখারও প্রধান। অমরপ্রীত জানেন, সীমানা পেরিয়ে আসা উদ্বেগক্লিষ্ট মানুষের কাছে সর্বাগ্রে প্রয়োজন এক ঢোক বিশুদ্ধ পানীয় জল। তিনি স্বয়ং টেকনাফের সীমান্তে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন এবং লক্ষ রাখছেন সীমান্তের ও পারে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে কি না। দেখা গেলে ধরে নিচ্ছেন, কোথাও আবার আগুন লাগানো হয়েছে। তিনি প্রস্তুত রাখছেন তাঁর দলকে।
ইতিমধ্যেই খালসা এইড টেকনাফে একটি লঙ্গরখানা খুলেছে। সেখানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের অন্ন সংস্থান সম্ভব হচ্ছে। তাঁরা কত দ্রুত একটা স্থায়ী আশ্রয় রোহিঙ্গাদের জন্য খুলতে পারেন, সেদিকে নজর রাখছেন খালসা এইড-এর কর্ণধাররা। সরকারি মতে ইতিমধ্যেই ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু অমরপ্রীত ও খালসা এইড-এর হিসেব বলছে সংখ্যাটা এর দ্বিগুণ হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিয়েছেন অমরপ্রীত ও তাঁর দলের সঙ্গে। কোনও বিঘ্ন, কোনও বিপত্তিতেই দমছেন না অমরপ্রীত ও তাঁর অষ্টাদশ অশ্বারোহী। শিখধর্মাবলম্বী এই ১৮ জন জানেন গুরু গোবিন্দের মন্ত্র। --এবেলা
বাহে গুরুজি কি খালসা!