আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাম্প্রতিক সংঘাতে ভারতই যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেছিল বলে আবারও জানিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার একথা জানিয়েছেন।
এছাড়া যুদ্ধবিরতির পর দুই দেশ নিরপেক্ষ কোনও স্থানে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (১৬ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পাকিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার গত ১০ মে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পেছনে যে নাটকীয় কূটনৈতিক অগ্রগতি ঘটেছিল তা নিয়ে কথা বলেছেন। মূলত এই যুদ্ধবিরতি ভারতের জনগণ—বিশেষ করে ভারতের যুদ্ধোন্মাদ মিডিয়াকে—চমকে দিয়েছিল।
ইসহাক দার বলেছেন, এ যুদ্ধে পাকিস্তান নয়, বরং ভারতই যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানিয়েছিল।
জিও নিউজের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আজ শাহজেব খানজাদা কে সাথ’-এ বৃহস্পতিবার দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসহাক দার বলেন, “গত ১০ মে পাকিস্তান ও ভারতের সেনাপ্রধানদের মধ্যে প্রথম যোগাযোগ হয়, এরপর ১২ মে তাদের মধ্যে আবারও কথা হয় এবং এরপর ১৪ মে তৃতীয় দফার কথা হবে বলে ঠিক হয়। আবার আগামী ১৮ মে তারা ফের যোগাযোগ করবেন।”
তিনি বলেন, দুই পক্ষই স্পষ্ট বুঝেছে যুদ্ধবিরতি কার্যত শুরু হয়ে গেছে এবং তা বজায় থাকবে। এখন দুই দেশের সামরিক বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) ধাপে ধাপে সেনা সরিয়ে পরিস্থিতি শান্তির দিকে ফিরিয়ে নেবেন।
দার বলেন, এই সেনা প্রত্যাহার তিন-চার দিন ধরে একেকটি ধাপে সম্পন্ন হবে এবং প্রতিটি ধাপে ডিজিএমও পর্যবেক্ষণ করবেন, যাতে পুরো প্রক্রিয়া নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যায়।
এ সময় তিনি ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “শিমলা চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান ও ভারত সব ইস্যু দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করবে—তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই। আমরা সেই চুক্তিতে সই করেছি এবং আমরা বরাবরই আলোচনার পক্ষপাতী।”
তিনি আরও বলেন, “কারগিল যুদ্ধের আগেও, পরেও, বহুবার আমরা দেখেছি ভারত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ওপরেই জোর দিয়েছে। আজকের বক্তব্যেও তা পরোক্ষভাবে স্পষ্ট। ফলে ভারতের পক্ষ থেকেই আজ দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ইঙ্গিত এসেছে।”
তিনি জানান, যুদ্ধবিরতির পর দুই দেশ নিরপেক্ষ কোনও স্থানে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখনও সেই নিরপেক্ষ স্থান ঠিক হয়নি।
তার ভাষায়, “আগামী আট থেকে দশ দিনের মধ্যে ভারতের সেনাবাহিনী সেনা মোতায়েন কমাবে, সৈনিকদের তাদের শান্তিকালীন অবস্থানে ফিরিয়ে নেবে। তারপর আলোচনা শুরু হবে। বিশ্ব এত বড়, একটা জায়গা ঠিক করা কঠিন কিছু নয়।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, “একবার যখন সঠিক স্থান নির্ধারণ হবে, তখন দুই দেশ সেখানে বসে আলোচনায় অংশ নেবে।”
এর আগে গত সপ্তাহে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানায়, যুদ্ধবিরতির অনুরোধ ভারতই করেছে, পাকিস্তান নয়। যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী গত রোববার স্পষ্টভাবে জানান, পাকিস্তান কখনোই যুদ্ধবিরতির জন্য অনুরোধ করেনি। তিনি বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে রেকর্ডে রাখতে চাই যে— যুদ্ধবিরতির কোনো অনুরোধ পাকিস্তান থেকে করা হয়নি।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “৬ ও ৭ মে রাতের ওই কাপুরুষোচিত ও নৃশংস হামলার পর ভারত যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানায়। কিন্তু পাকিস্তান তখন জানিয়ে দেয়, আমরা উপযুক্ত জবাব দেওয়ার পরই বিষয়টি নিয়ে আবার কথা বলব।”
তিনি আরও বলেন, “১০ মে পাকিস্তান পাল্টা জবাব এবং প্রতিশোধ নেওয়ার পর আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের আহ্বানে আমরা ভারতের করা অনুরোধে সাড়া দিই”। এছাড়া তিনি জানান, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনী যেসব বিবৃতি দিয়েছে, তাতে পরিষ্কারভাবে যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রশমনের আহ্বান ছিল।