কামরুজ্জামান মিলু : আমাদের দেশে বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়ের দাপুটে ও স্বনামধন্য অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে অনেকেই এখন চলচ্চিত্র থেকে দূরে। এদের মধ্যে কেউ ঘোষণা দিয়ে চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিয়েছেন।
আবার কেউ সাময়িক বিরতি নিয়েছেন। চলচ্চিত্রের প্রিয় এই মুখগুলোর মধ্যে রয়েছেন রাজ্জাক, উজ্জল, ফারুক, আলমগীর, সোহেল রানা, কবরী, ববিতা, অঞ্জনা, রোজিনা, ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ। দু-একটি ডিজিটাল নামের ছবিতে অভিনয় করে অনেকে তিক্ত। তাই তারা এ ধরনের চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চান না।
সম্প্রতি গুণী অভিনেত্রী ববিতা এ প্রসঙ্গে বলেন, ডিজিটাল নামে নিম্নমানের ছবি নির্মাণ হচ্ছে। এগুলোকে ছবি বলতে চাই না আমি। তাই তিক্ত হয়ে এই জায়গা থেকে দূরে সরে গেছি। আমি আগের চলচ্চিত্রের মতো আর এসব ছবিতে প্রাণ খুঁজে পাই না। তাই অনেকটা কনফিউজ হয়ে অভিনয় থেকে দূরে সরে আছি।
তিনি আরো বলেন, চলচ্চিত্রের মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ হলেই তো অভিনয়শিল্পীরা কাজ করতে চাইবে তাই না? ভালো গল্পনির্ভর চলচ্চিত্র পেলেই কেবল অভিনয় করবো, না হলে এমন চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাই না।
ববিতার অভিনয় থেকে দূরে সরে যাওয়ার ঘোষণার বেশ আগে অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন সর্বাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা আলমগীর। চলচ্চিত্র অভিনয় নিয়ে তার ভাষ্য, আমি নতুন ছবিতে অভিনয় করতে গেলে অবশ্যই মূল স্ক্রিপ্ট আগে চাই। এটা না পেলে অভিনয় করতে চাই না।
এদিকে সিনিয়র নায়কদের মধ্যে নায়করাজ রাজ্জাককে অসুস্থতার কারণে বড় পর্দায় খুঁজে পাওয়া যায় না বললেই চলে। অন্যদিকে, সোহেল রানা এবং মেগাস্টার উজ্জলকেও নিয়মিত বড়পর্দায় দেখা যাচ্ছে না। একই অবস্থা চিত্রনায়ক ফারুক, অঞ্জনা, ইলিয়াস কাঞ্চনসহ আরও অনেকের।
অভিনয় না করার ব্যাপারে অনেক নির্মাতার অভিমত, সিনিয়র শিল্পীরা বর্তমানে হাঁটুর বয়সী জুনিয়র শিল্পীদের আচার-আচরণেও বেশ ক্ষুব্ধ। কাজ করতে গিয়ে আপস করতে চান না। উপযুক্ত সম্মান না পেয়ে হতাশ তারা। ফলে এর প্রভাব পড়ছে চলচ্চিত্র শিল্পে।
সিনিয়র শিল্পীদের মধ্যে সুব্রত, শাহনাজ, রেবেকা পারভীন, সাদেক বাচ্চু, মিজু আহমেদের মতো কয়েকজন তারকা ঘুরেফিরে অভিনয় করেন। তবে তাদের চরিত্রের মধ্যেও তেমন কোনো পরিবর্তনের ছোঁয়া নেই। এছাড়া কম বাজেটের কিছু ছবিতে মাঝে মধ্যে নাট্যাঙ্গনের মুখও দেখা যায় নানা চরিত্রে।
জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ও অভিনেত্রী চম্পাকে নিয়ে কাজ করার মতো পরিচালকেরও দারুণ অভাব রয়েছে বলে মনে করেন অনেক নির্মাতা। এদিকে রোজিনাও সরে গেছেন স্বেচ্ছায়। বেশির ভাগ সময় তিনি প্রবাসে থাকেন। ‘রাক্ষুসী’র পর আর কোনো ছবিতে তাকে দেখা যায়নি। নূতনের মতো অভিনেত্রীকে নেগেটিভ চরিত্রে কাজ করতে হয়।
এ প্রসঙ্গে সিনিয়র অভিনয়শিল্পী অঞ্জনা বলেন, ত্রিশ বছর ধরে দর্শক একই গল্প দেখে আসছে। এই প্রতিশোধ আর মারামারির ছবি আর তারা দেখতে চায় না। আমাদের চলচ্চিত্রে গল্প পরিবর্তন না হলে কিভাবে সিনিয়র শিল্পীরা কাজ করবেন। আর আমি তো নৃত্যশিল্পী। নিয়মিত স্টেজে পারফর্ম করছি। তাই অন্য সিনিয়র শিল্পীদের মতো সব ছবিতে কাজ করতে পারি না। কারণ, বাংলাদেশের দর্শক আলাদা।
অন্যদিকে, নায়ক-নায়িকারাও মাঝে মাঝে প্রযোজক ও পরিচালক হয়ে কাজ করছেন। বছরে ছবি তৈরি হচ্ছে অনেক। কিন্তু ভালো সংখ্যার ছবি দর্শকরা যেমন পাচ্ছেন না, তেমনি ভালো চরিত্র ও গল্পের কারণে সিনিয়র শিল্পীরাও চলচ্চিত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। -মানবজমিন
১৩ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি