শ্রীপুর (গাজীপুর) : রাত তখন ১২টা। বাড়ির সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ঠিক সেই সময় কৌশলে সবার ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেয় পাষণ্ড সাহিদ হাওলাদার। এরপর প্রবেশ করেন নিজ রুমে। সেখানে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্ত্রী শিউলি আক্তার। ঘরে ঢুকেই পেট্রল ঢেলে শিউলির শরীরে আগুন দিয়ে দেয় সাহিদ। আর এতেই দগ্ধ হয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পরপারে পাড়ি জমান ৩২ বছর বয়সী শিউলি আক্তার।
শিউলি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামের শুক্কুর আলীর মেয়ে এবং বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মোতালেব হাওলাদারের ছেলে মো. সাহিদ হাওলাদারের স্ত্রী। তারা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ গ্রামের মাফিয়া আক্তারের বাড়ির ভাড়াটে।
শ্রীপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক জানান, ৯ বছর আগে প্রেম করে তাদের বিয়ে হয়। এটি ছিল সাহিদ ও শিউলী উভয়েরই দ্বিতীয় বিয়ে। বেশ কিছুদিন ধরে তারা মুলাইদ এলাকার মাফিয়া আক্তারের ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন। পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের জেরে বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো। স্বামী তাকে মারধরও করতো।
গতকাল সোমবার রাতেও কারখানা থেকে পাওয়া বেতন স্বামী কেড়ে নিতে চাইলে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে মধ্যরাতে নিজ কক্ষে যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্ত্রী শিউলি আক্তার তখন শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় পাষণ্ড স্বামী। এ সময় স্বামী পালাতে গেলে শিউলী তাকে চেপে ধরে মেঝেতে পড়ে যায় এবং স্বামীর শরীরেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে স্বামীর দুই হাত দ্বগ্ধ হয়।
এসময় শিউলীর ডাক চিৎকার শুনে বাড়ির লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে এবং তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুরে শিউলী মারা যান। সাহিদ সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশের নজরদারীতে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী সাহিদ স্ত্রীর শরীরে আগুন দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
বাড়ির মালিক মাফিয়া আক্তার জানান, সোমবার মধ্যরাতে আমরা শিউলির ঘর থেকে কান্নার শব্দ পেয়ে গিয়ে দেখি তাদের রুমের দরজা ভেতর থেকে আটকানো। পরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখি মুমূর্ষু অবস্থায় শিউলি ও তার স্বামীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।