নিউজ ডেস্ক: চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬.৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই হার কমে ৬.২ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। অন্যদিকে বাংলাদেশে হতদরিদ্রের হার কমে ১২.৯ শতাংশ হবে বলে জানায় বিশ্বব্যাংক।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শেরেবাংলা নগরে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনের সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বেশকিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছে বিশ্বব্যাংক। চ্যালেঞ্জগুলো হলো বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, অবকাঠামোর ঘাটতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। এছাড়া, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখনো কিছু উদ্বেগ রয়েছে। স্থিতিশীলতা থাকলেও উদ্বেগ কাটেনি। বিনিয়োগ না হয়ে সঞ্চয়ের অর্থ পাচার হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান, বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী এস পারালকার, অর্থনীতিবিদ শেখ তানজেব ইসলাম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহরীন-ই মাহবুব।
সরকার চলতি অর্থবছরে ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করলেও বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, শেষ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬.৮ শতাংশ। সেক্ষেত্রে হতদরিদ্র্যের হার ১২.১ শতাংশে নেমে আসবে।
জাহিদ হোসেন বলেন, জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ বাড়লে হতদরিদ্র কমবে ১.৫ শতাংশ। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কোনো দেশের দারিদ্র্যের হার বলতে মূলত হতদরিদ্রদেরই বোঝানো হয়। প্রত্যেক অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ভিত্তিতে বিচার করে বিশ্বব্যাংক এই হার ঠিক করে। সেই হিসেবে ২০১০-১১ সময়ে বাংলাদেশে অতিদরিদ্রের হার ছিল ১৭.৪ শতাংশ; ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ১৬.৪ শতাংশ; ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ১৫.৫ শতাংশ; ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ১৪.৭ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ১৩.৮ শতাংশ। জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ‘কিছু অনিশ্চয়তার কারণে’ আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬.২ শতাংশ। সেক্ষেত্রে হতদরিদ্র্যের হার কমে হবে ১২.১ শতাংশ।
জাহিদ বলেন, ব্যক্তি বিনিয়োগ বৃদ্ধি না পাওয়ায় সরকারি ও ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের ব্যবধান বেড়েছে। বিনিয়োগে স্থবিরতা রয়েছে। এটা সঞ্চয়ের কারণে না। অর্থের অভাব নেই। অর্থ যাচ্ছে রিজার্ভ ভিত্তিতে এবং অর্থ পাচার হচ্ছে। দেশে বিনিয়োগ না করতে পারায় টাকা পাচার করা হচ্ছে। পাচারের কারণ হলো, অবকাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হয়নি এবং ব্যবসায় ভোগান্তি বেশি। গত বছরের তুলনায় এখন রেমিট্যান্স প্রবাহ ২.৫ শতাংশ কমেছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, দরিদ্রতার হার কমাতে হলে প্রবৃদ্ধির জন্য কাঠামোগত সংস্কার আরো বেগবান করতে হবে। ২০০৫ থেকে ২০১০ সালে যে অর্জন ছিল তা ধরে রাখতে পারলে এসডিজিতে দরিদ্রতা হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। ৮.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করতে পারলে এসডিজির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান জানান, দরিদ্রের হার কমিয়ে আনতে হলে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও দরিদ্রের হার কমাতে হলে মানব উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি, পলিসি সংস্কার বিশেষ করে আর্থিক ও জ্বালানি খাতে করতে হবে। চিমিয়াও ফান বলেন, হতদরিদ্র কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রশংসার দাবিদার। কর্মসংস্থানের নানা সুযোগে কমেছে হতদরিদ্র। যেভাবে দেশের অগ্রগতি হচ্ছে এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে দেশে হতদরিদ্রের হার হবে মাত্র ৩ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তার মাধ্যমে এসডিজি নির্ধারিত শূন্য দরিদ্র (জিরো পোভার্টি) লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারা বজায় থাকলে ২০৩০ সালে দরিদ্রের হার দাঁড়াবে ৫.৯৮ শতাংশ। শূন্য দরিদ্রের লক্ষ্য অর্জনে ৮.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। দরিদ্রের হার হিসাবের ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতির প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের তুলনায় দরিদ্রের হার কম। ২০১০ সালে হতদরিদ্রের হার ছিল ১৮.১০ শতাংশ। ২০১৬ সালে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ১২.৯ শতাংশে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যক্তিখাতে প্রবৃদ্ধি কমছে। অপরদিকে সরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম (জিডিপি’র ২১.৮ শতাংশ)। সঞ্চয়ের অভাবে নয়, বরং বিনিয়োগের অভাবে এই সমস্যা। সঞ্চয়ের কিছু অর্থ যাচ্ছে রিজার্ভে আর কিছুটা পাচার হচ্ছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়লেও এর নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে।-মানবজমিন
৪ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর