মাহাবুর আলম সোহাগ : ‘ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। আর পারছি না। একই অবস্থা আমার ছোট ভাই জুয়েল রানারও। সে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। ছোট বোন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। সেও খুব কষ্ট করে পড়ালেখা করছে। নিজের যেটুকু কৃষিজমি আছে সেটুকু দিয়ে সংসার চলে না। তাই বাবা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। মাও বাড়ি বাড়ি কাজ করেন। তাদের এসব কষ্ট আর সহ্য হয় না। তাই সাতদিন আগে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে এসেছি চাকরি খুঁজতে। এখানে কার কাছে চাকরি চাইবো? কাউকে তো চিনি না। কয়েকদিন গেছি বিভিন্ন অফিসে ঢুকতেই দেয়নি। তাছাড়া এই যোগ্যতা দিয়ে কি এমন চাকরি পাবো? এসব ভেবে কোনো উপায় না পেয়ে রিকশা চালাতে শুরু করেছি।’
গতকাল রোববার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর শ্যামলী শিশুমেলার অপরপ্রান্তে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় সুঠাম দেহের এই তরুণকে।
রিকশায় উঠে তার কথাবার্তা অন্য কয়েকজন রিকশাচালকের চেয়ে একটু আলাদা মনে হওয়ায় তাকে ঘিরে কৌতূহলের সৃষ্টি হয় এই প্রতিবেদকের। তার সঙ্গে কথোপকথন শুরু হলে এভাবেই মনের কষ্টগুলো বলছিলেন ওই তরুণ।
ঢাকার রাস্তায় নতুন এই যোদ্ধার নাম মো. রাজু আহমেদ। বাড়ি দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের আলীহাট কাসিয়াডাঙ্গা গ্রামে।
তিনি ওই গ্রামের মো. আফজাল হোসেনের ছেলে। রাজু বর্তমানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর মনসুরাবাদে একটি রিকশার গ্যারেজে থাকেন।
এ বছর হাকিমপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন রাজু। এর আগে এইচএসসি পরীক্ষায় হাকিমপুর কলেজের কারিগরি শাখা থেকে জিপিএ ৩.৯৬ পান। এর আগে আলীহাট মাদরাসা থেকে দাখিলে জিপিএ ৪.১৩ পান তিনি।
রাজু জানান, মাথার উপর যখন অভাব ঘুরপাক খায়, তখন ভালোভাবে পড়ালেখা করা যায় না। তবুও নিজের চেষ্টায় এত দূর এসেছি। ছোট ভাই-বোন দুটির পড়ালেখায় সহযোগিতা করতেই ঢাকায় ছুটে এসেছি।
তিনি জানান, সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় আমাদের এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি। আমার সব বন্ধু এখন ফেনসিডিলে আসক্ত। সেখানে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা খুব কঠিন কাজ। বলতে গেলে মাদকের কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ঢাকায় আসা।
ঢাকায় রিকশা না চালিয়ে এলাকায় টিউশনি বা কোচিং করানো তো যেতে পারে। এমন পরামর্শে রাজু জানান, এলাকায় শিক্ষার হার খুব কম। আমরা তিন ভাই-বোন পড়ালেখা করছি তাতেই অনেকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে কটূক্তি করছে।
কেউ কেউ তো বলে, বাপ অন্যের জমিতে কাজ করে আর ছেলে কলেজে যায়। তা না করে বাপের সঙ্গে অন্যের বাড়িতে কাজ করলেই তো হয়। আমরা লেখাপড়া করি এটা এলাকার কেউ মেনে নিতে পারে না। কারো কাছে ভালো পরামর্শ পাওয়া যায় না। সবাই বলে বাপের সঙ্গে অন্যের বাড়িতে কাজ করার কথা।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রাজু বলেন, আমরা যখন পড়তে বসি তখন এলাকার অনেকেই আমাদের বাড়িতে আব্বার কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসে তাদের বাড়িতে আমাদের কাজের ছেলে হিসেবে রাখার। আপনিই বলেন, এসব দৃশ্য দেখে এলাকায় থাকা কতটা ঠিক। -জাগো নিউজ।
০৪ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম