বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৭, ০১:৫০:৪৩

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অজানা অধ্যায় যা বললেন শেখ সেলিম

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অজানা অধ্যায় যা বললেন শেখ সেলিম

নিউজ ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর বংশ থেকে যেন আর কেউ নেতৃত্ব দিতে না পারে, যাতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর কখনো মাথাচাড়া দিতে না পারে সে উদ্দেশেই সবাইকে হত্যা করা হয়েছিল।

৮ আগস্ট নিউজ টোয়েন্টিফোর-এ প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমানের হাত যে ছিল সেটা কর্নেল রশিদ তার বইতে লিখে গেছেন। তার কর্মকাণ্ড দেখলেও তা বোঝা যায়। বঙ্গবন্ধু হত্যার সাত দিনের মাথায় তিনি সেনাবাহিনীর প্রধানের পদটি নিলেন। তাদের সঙ্গে যোগসাজশ না থাকলে তিনি কেন হত্যাকারীদের বিচার হবে না মর্মে ইনডেমনিটি আইন পাস করলেন?

শেখ সেলিম বলেন, তিনি (জিয়া) তো আসলে নিজেকেই বাঁচালেন। তিনি ছিলেন পাকিস্তানি এজেন্ট। পাকিস্তানের জেনারেল আসলাম বেগের চিঠিতেই এর প্রমাণ আছে। তারা ওখান থেকে লিখেছে, ‘জিয়া তোমার কাজে আমরা খুশি। তোমার পরিবার সুরক্ষিত আছে।’ এ ছাড়া সেনা প্রধান শফিউল্লাহকে বঙ্গবন্ধু ফোন করেছিলেন। কিন্তু তারা তাদের কর্তব্য পালন করেননি।

শেখ সেলিম বলেন, কমিশন গঠন হলে এদের সবকিছু বেরিয়ে আসবে। ১৫ আগস্ট তার সামনে তার বড় ভাই শেখ ফজলুল হক মণির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে শেখ সেলিম বলেন, ‘ভোর ৫টার দিকে সেনাবাহিনীর ৭-৮ জন সদস্য আমাদের বাড়িতে আসে। মণি ভাই খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতেন। সকালে উঠে অনেক খবরের কাগজ নিয়ে বসতেন। নিচে কথাবার্তা শুনে তিনি নিচে নেমে দেখেন, কয়েকজন আর্মি দরজায় দাঁড়িয়ে। দেখে তিনি দৌড়ে উপর তলায় চলে আসেন। টেনশনে তিনি পায়চারি করছেন। এ সময় আমার স্ত্রী নামাজ পড়তে উঠেছিলেন। মণি ভাইকে এভাবে পায়চারি করতে দেখে তিনি এগিয়ে গিয়ে বলেন, ভাই কী হয়েছে টেনশন করছেন কেন? এর মধ্যেই আর্মি বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে। মণি ভাই এগিয়ে যেতেই তারা বলে, ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট।’

শেখ সেলিম বলেন, এই অবস্থা দেখে আমার স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। ওই অবস্থায় বাইরে এসে দেখি মণি ভাই ওদের বলছেন, আমি কী অন্যায় করলাম। তারা বলছে, আমাদের সঙ্গে চলেন। এ সময় বামপাশে ভাবী আর ডানপাশে আমি দাঁড়ানো। আর দরজার পাশে আমার স্ত্রী। মণি ভাই বলেন, কেন আপনাদের সঙ্গে যেতে হবে? বলেই তিনি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে ফিরতেই ওরা ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। এতে মণি ভাই আর ভাবীর শরীর ঝাঁজরা হয়ে যায়। এই অবস্থা দেখে আমি ওদের সঙ্গে মাটিতে পড়ে যাই। মারা গেছি ভেবে হত্যাকারীরা দোতলা থেকে নিচে নেমে যায়।

তিনি বলেন, ‘নিচের তলায় থাকত আমার ছোট ভাই মারুফ আর মা-বাবা। মা গুলির শব্দ শুনে চিৎকার-কান্না শুরু করলে ওরা ভেবেছে আমরা বেঁচে আছি, চিৎকার করছি। তখন সিঁড়ির পাশ থেকে আবার আমাদের তাক করে গুলি শুরু করে। আমার কানের ঠিক ওপর দিয়ে গুলি চলে যায়। ওরা নেমে গিয়ে গাড়ি স্ট্যার্ট দেওয়ার শব্দ শুনতে পেয়ে আমি দৌড়ে নেমে সবাইকে ডাক দিই। বঙ্গবন্ধুর বাসায় ফোন দিলাম। ফোন যাচ্ছিল না। এরপর মারুফ ফোনে চেষ্টা করল জামাল ফোন ধরল।’

শেখ সেলিম বলেন, ‘মারুফ আর জামাল সমবয়সী ছিল। ও তখন জামালকে বলল যে, আর্মিরা মণি ভাইকে মেরে ফেলেছে। এ কথা জামাল জোরে বলে উঠলে ফোনের ওপাশে বঙ্গবন্ধু বলেন, কি! ওরা আমার মণিকে মেরে ফেলেছে। জামাল তখন বলে দাঁড়াও দেখছি। শেখ মণি এবং তার স্ত্রী আরজুকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন শেখ সেলিম। সে সময়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মণি ভাই যখন পেছনে ঘুরেছিলেন তখন একটা গুলি তার শরীর ফুড়ে বেরিয়ে যায়। ওই গুলিতেই মারা গিয়েছিলেন মণি ভাই। ভাবীর তলপেটে গুলি লেগেছিল। তিনি খুব ছটফট করছিলেন।’

তিনি বলেন, তখন আমরা তাদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়িতে তুলি। তখন পরশ আর তাপস হাত ধরে বলে, ‘চাচা, মা-বাবাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?’ ওরা অনেক ছোট। পরশের বয়স তখন পাঁচ বছর। মণি ভাইকে গাড়িতে তুললাম ভাবীকে আরেকটা গাড়িতে তুললাম। শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে গিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাইকে নামিয়ে ভাবীকে নামাচ্ছি। এ সময় একটা গাড়ি পেছনে হর্ন দিচ্ছিল। তখন আমি বললাম, হর্ন দিচ্ছেন কেন? তাকিয়ে দেখি রমনা থানার ওসি আনোয়ার।’

শেখ সেলিম বলেন, তিনি পুলিশের গাড়িতে করে মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের পরিবারের আহত কয়েকজনকে নিয়ে এসেছেন। এই পরিবারের বেশ কয়েকজন গুলিতে মারা যান। ওই আহতদের তাড়াতাড়ি নামালাম। এরপর হঠাৎ একটা ছোট ছেলে আমার কাছে দৌড়ে এলো। ওকে চিনলাম। নাম আলতাফ। ছেলেটি রাসেলের সঙ্গে খেলত। আলতাফের হাতে গুলি লেগেছে।

শেখ সেলিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কাজের লোক আবদুলও গুরুতর আহত। তাকে বললাম, কি হয়েছে? সে বলল, ‘ভাই! স্যারকে মেরে ফেলেছে।’ হাসপাতালের কয়েকজনকে বললাম যে বাড়িতে ফোন করতে হবে। বাড়িতে ফোন করে জানালাম। এর কিছুক্ষণ পরে সেখানে আর্মি এসে হাজির হলো। এরই মধ্যে রেডিওতে বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা ঘোষণা করা হলো। কারফিউ জারি হলো। কারফিউ শিথিল করার পর বের হলাম।’ -বিডি প্রতিদিন
 
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে