বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৬:০২:১৩

‘ঘুষের সহনীয় মাত্রা’ বিষয়ে বলা কথার ব্যাখ্যা দিলেন শিক্ষামন্ত্রী

‘ঘুষের সহনীয় মাত্রা’ বিষয়ে বলা কথার ব্যাখ্যা দিলেন শিক্ষামন্ত্রী

ঢাকা: অতীতের বিভিন্ন ঘটনা ও পরিস্থিতির উদাহরণ তুলে ধরতে গিয়েই ‘ঘুষের সহনীয় মাত্রা’ এবং ‘অফিসার চোর’-‘মন্ত্রী চোর’ মন্তব্য করেছিলেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, কয়েকটি পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়া খণ্ডিতভাবে বক্তব্য প্রকাশ করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে ।

২৪ ডিসেম্বর শিক্ষাভবনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর-ডিআইএ’র এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এই সংবাদ সম্মেলনে। ওই অনুষ্ঠানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তবে সেই বক্তব্য গণমাধ্যমে যথাযথভাবে আসেনি বলে নিজের অবস্থান ব্যখ্যা করেন তিনি।

নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন: ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর শুরুর দিকে ডিআইএ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগে নিয়ে আসতেন শিক্ষকরা। তারা বলতেন, সহনীয় মাত্রায় ঘুষ নিলে তারা চলতে পারবেন। এই উদাহরণই তিনি দিয়েছেন সেদিন।

‘অনেক শিক্ষক এসে আমার কাছে কান্নাকাটি করে বলতেন, আমরা নিম্ন বেতনে চাকরি করি, এত টাকা আমরা কোথা থেকে দেবো। এক মাসের বেতন সম্পূর্ণ টাকা ঘুষ দিলে পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা খাব কী করে? ঘুষের মাত্রা আরেকটু সহনীয় হলেও বাঁচতাম বলে তারা মন্তব্য করতেন। এটা শিক্ষকদের কথা।’

নিজেকে দুর্নীতিবাজ ও চোর আখ্যা দেয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, ‘তারা যখন শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা চাইতেন, পুরা মাসের বেতন নিয়ে নিতে চাইতেন, তখন শিক্ষকরা কম দিতে চাইতেন। তখন তারা বলতেন এত কম টাকায় হবে না, ওপরেও দিতে হবে। তাতে শিক্ষক কর্মচারীরা মনে করতে বাধ্য হতো, তাদের প্রদত্ত ঘুষ শুধু পরিদর্শনকারীরা পেত না, ঊর্ধ্বতন আমলারা পায় এবং মন্ত্রী হিসেবে আমিও পাই। স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষক কর্মচারীরা মনে করত অফিসাররা চোর, মন্ত্রীও চোর।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে এই ছিল অবস্থাটা। মানুষের কাছে টাকাটা যখন চাইত, তখন বলত ওপরে দিতে হয়। ওপরে মানে কী? আরও বড় অফিসার, আরও বড় মন্ত্রী, তখন মানুষ বলত মন্ত্রীও খায়।’

‘তখন মানুষ মনে করত, আমলা, অফিসার আর মন্ত্রীরাও ঘুষ খায়। আমি মন্ত্রীও ঘুষ খাই, আমি মন্ত্রীও চোর, এটা মানুষের একটা ধারণা ছিল। শিক্ষকরা আমাদেরকে এ কথা বলেছেন।’

তবে মন্ত্রী বলেন, সেদিন তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলের উদাহরণ দিলেও ওই সরকারের নাম নেননি।

বিএনপির সমালোচনার জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আসলে তাদের সময়ই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতের সময়, বরং তাদেরই উচিত এর ব্যাখ্যা দেয়া, তাদের কুশাসনের ফসল এটা।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ভালো ব্যবহারকে অসহায়ত্ব হিসেবে দেখা হয়। ভালো সংস্কৃতিকে দুর্বলতা হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

পরিসংখ্যান তুলে ধরে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বিশ্বে শিক্ষাক্ষেত্রে গড় দুর্নীতির হার ১৭ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে ১২ শতাংশ। এটাকে শূন্যের ঘরে নামিয়ে আনার জন্য বিরামহীন কাজ করে যাওয়ার কথা জানান মন্ত্রী।
এমটি নিউজ/আ শি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে