এ টি এম নিজাম, কিশোরগঞ্জ ব্যুরো: এবার নতুন বছরে নতুন ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আলোচনায়ও ঘুরে ফিরে আসছে কিশোরগঞ্জের ২ কৃতী ব্যক্তিত্ব বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হমিদ ও দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নাম। পাশাপাশি উঠে আসছে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নামও।
চলতি ২০১৮ সালের ২১ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফলে বছরের শুরুতেই সকলেরই দৃষ্টি এখন ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে।
এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা-সমালোচনা। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালনের ইতিহাস বরাবরই কিশোরগঞ্জকে এগিয়ে রেখেছে। আর এ কারণে ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়েও কিশোরগঞ্জের মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা ও গুঞ্জনের অন্ত নেই।
এদের মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম) আসন থেকে দলীয় মনোনয়নে সাত সাতবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড করেছেন। দীর্ঘ ৩৭ বছর কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে কাণ্ডারীর ভুমিকা পালন করেছেন।
অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী মুজিব নগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের জ্যেষ্ঠপুত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ-১ (সদর ও হোসেনপুর) আসন থেকে চার চারবার দলীয় মনোনয়েনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পাশাপশি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
আর বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ী জমিদার বাড়ির কৃতী সন্তান সৈয়দ বদরুদ্দিন হোসাইনের ছেলে ফার্মাসিউটিক্যাল কনসালটেন্ড সৈয়দ ইশতিয়াক হোসেনের পত্নী।
তবে এ ৩ জনের মধ্যে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও জন প্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে আলোচনায় এগিয়ে রাখছেন এলাকাবাসী। কেউ বলছেন, স্পিকার ও রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্বশীল ও গ্রহণযোগ্য ভুমিকা পালন করে প্রজ্ঞার পরিচয় দেয়ায় আবদুল হামিদই হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। আবার কেউ বলছেন, পিতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ন্যায় নিবেদিত প্রাণ হয়ে দলের দুর্দিনে কান্ডারীর ভূমিকা পালন করায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হবে।
কিশোরগঞ্জের অপর কৃতী সন্তান মরহুম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মৃত্যুর ৬ দিন পূর্র্বে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তৎকালীন স্পিকার আবদুল হামিদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের সর্ব সম্মত সিদ্ধান্তে তিনি দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তিনি।
নতুন বছরের শুরুতেই ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা-সমালোচনা। আর এ আলোচনায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর নাম বিপুলভাবে আলোচিত হচ্ছে। এ আলোচনায় থাকা পাঁচ ব্যক্তির প্রথম ৩ জনই কিশোরগঞ্জের।
চলতি বছরের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। তবে এ নির্বাচনে যে দলই সংখ্যাগরিষ্ঠাতা পেয়ে সরকার গঠন করুক না কেন বর্তমান সরকার নির্বাচিত ব্যক্তিই থাকছেন একাদশ নির্বাচন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পযর্ন্ত কিশোরগঞ্জের সন্তান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলায় গঠিত মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও উপদেষ্টা মনোনীত হন কিশোরগঞ্জের দুই কৃতী সন্তান।
ওই সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং মাওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী, কররেড মণি সিং, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের সঙ্গে উপদেষ্টা মনোনীত হন কিশোরগঞ্জের অপর কৃতী সন্তান মনোরঞ্জন ধর। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কয়েকদিনের মধ্যেই তার নেতৃত্বে সংসদীয় সরকার গঠিত হয়।
ওই সরকারে সৈয়দ নজরুল ইসলাম শিল্পমন্ত্রী ও মনোরঞ্জন ধর আইনমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু সরকারে দায়িত্ব পালন করেন। সরকার গঠনে অব্যবহিত পর বঙ্গবন্ধু দলের পুনর্গঠনে মনোযোগ দেন এবং ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল।
সমবেত কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি এবং কিশোরগঞ্জের দুই কৃতী সন্তান সৈয়দ নজরুল ইসলাম সহ-সভাপতি ও জিল্লুর রহমান প্রথম বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল গঠিত হলে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাকশালের সহ-সভাপতি এবং জিল্লার রহমান অন্যতম যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় অন্য ৩ নেতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় কারাগারে ঘাতকের বুলেটে শহীদ হন কিশোরগঞ্জের বীর সন্তান সৈয়দ নজরুল ইসলাম। পরবর্তীকালে জিল্লুর রহমান দীর্ঘদিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বপালন শেষে দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুর পর কিশোরগঞ্জের অপর কৃতী সন্তান সাবেক স্পিকার আব্দুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
সৈয়দ নজরুল ইসলামের জ্যৈষ্ঠ্যপুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বচিত এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া বিগত ওয়ান-ইলেভেনের দুযোর্গে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা কারাগারে অন্তরীণ হলে প্রয়াত নেতা জিল্লুর রহমান ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শেষ বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাণ্ডারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
এ সব কারণে বিশ্বাস এবং আস্থার জায়গা থেকে কিশোরগঞ্জের কৃতী সন্তানেরা বার বার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।-যুগান্তর
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস