বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৪:৩৬:২৩

সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণে পাঁচ নির্দেশনা ইসির

সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণে পাঁচ নির্দেশনা ইসির

বিশেষ প্রতিনিধি : অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে সাংবাদিকরা কখনো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন এমন অভিযোগ নেই। তার পরও নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবারের পৌর নির্বাচনে সাংবাদিকরা যাতে ‘নির্বাচনের কাজে বাধা হতে না পারেন’ তার জন্য বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে। বলা হয়েছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যাওয়া সাংবাদিকদের প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। এর ফলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা ভোটকেন্দ্রে বড় ধরনের অনিয়ম হলেও প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না সাংবাদিকরা। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন থেকে নেওয়া পরিচয়পত্র ও অনুমতিতেও কোনো কাজ হবে না। জানা যায়, সম্প্রতি ইসি সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখার পরিচালকের সই করা ওই নির্দেশনা রিটার্নিং অফিসারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে সাংবাদিকরা পাঁচটি নির্দেশনা মেনে চলবেন বলে রিটার্নিং অফিসারদের অবগত করা হয়েছে। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে—ভোটকেন্দ্রে যাই ঘটুক না কেন প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া ভোটকক্ষে প্রবেশ করা যাবে না, কোনো প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করা যাবে না, সাংবাদিকরা ভোটে প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যেকোনো ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য সংবিধান, নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন। ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই বলছেন, এ ধরনের নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে পাঠানোর ফলে সাংবাদিকরা তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন না। প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে ভোটকেন্দ্রের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গেলে সারা দিনে একজন সাংবাদিকও সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন কি না সন্দেহ রয়েছে। কারণ প্রিসাইডিং অফিসাররা সাংবাদিকদের অনুমতি দেওয়ার জন্য সেখানে বসে থাকেন না। তাঁদের অনেক কাজ রয়েছে। এ ধরনের নির্দেশনা আগে কখনো কমিশন থেকে দেওয়া হয়নি। ওই কর্মকর্তাদের ধারণা, এ নির্দেশনার ফলে ভোটকক্ষের ভেতরের কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পরিবেশনে অসুবিধা হবে। এ ক্ষেত্রে অনুমতি পেতে দেরি হলে প্রকৃত ঘটনা জানাতে পারবে না গণমাধ্যম। ব্যালট পেপার বা নির্বাচনী উপকরণ দুর্বৃত্তরা নষ্ট করলেও সে সংবাদের গভীরতা বা প্রমাণযোগ্যতা কমে যাবে। এ ছাড়া এ নির্দেশনার মাধ্যমে সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ‘সাংবাদিকরা ভোটে প্রার্থী বা দলের পক্ষে-বিপক্ষে কোনো কর্মকাণ্ড চালাতে পারবেন না’—এমন কথা নির্দেশনায় উল্লেখ করার মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে ওই ধরনের কর্মকাণ্ড হিসেবে চালিয়ে দেওয়ারও সুযোগ রাখা হয়েছে। এ নির্দেশনার ফলে কোনো প্রিসাইডিং অফিসার, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বা নির্বাচনী দায়িত্বরত অন্য কোনো কর্মকর্তা অনিয়ম করলেও সে সংবাদ প্রকাশ বা প্রচার সীমিত হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে অনিয়মকারী কর্মকর্তাকে সুরক্ষা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনা নজিরবিহীন। ভোট কারচুপির সুযোগ করে দিতেই কমিশন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে না দিলে নির্বাচনে কারচুপি হবে। বাড়বে সহিংসতা। কমিশন থেকে এ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হলে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক, যা গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য বড় ধরনের হুমকি। তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে নয়, ভোটকক্ষে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে থাকেন। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের জন্য অনুমতি প্রয়োজন হলে পুলিশ প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ পর্যন্ত সাংবাদিকদের যেতে দিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থাকে মেরুদণ্ডহীন রকিব কমিশন অনেক আগেই ধ্বংস করেছে। এবার সাংবাদিকদের ওপর ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে বাকিটুকুও শেষ হয়ে যাবে। এর ফলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সাংবাদিকদের আর স্বাধীনতা থাকল না। প্রিসাইডিং অফিসার অনুমতি না দিলে ভোটকেন্দ্রেই প্রবেশ করতে পারবেন না সাংবাদিকরা—এটা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত। তিনি বলেন, এ ধরনের নির্দেশনা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাম্প্রতিক বক্তব্যের পরিপন্থী। তিনি বলেছিলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের সহায়ক শক্তি। গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কয়েক দিন আগে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘একটি ভোটকেন্দ্রে পাঁচজনের অধিক সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবেন না এবং একই কেন্দ্রে দীর্ঘক্ষণ অবস্থানও করা যাবে না।’ সে সময় ইসির পক্ষে বলা হয়েছিল, এ ধরনের বক্তব্য শুধু নির্বাচন কমিশনই দিতে পারে, অন্য কেউ নয়। কিন্তু তার পরও ওই নির্বাচনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেওয়া এবং তাঁদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, পুলিশের পরামর্শেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টা করছে। এ ছাড়া সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনাররা কয়েকটি দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এসে মত দিয়েছেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন না সাংবাদিকরা। কিন্তু এ দেশে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশের কারণে নির্বাচনী কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। তাই তাদের বিচরণ নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত। তবে এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারই সব ক্ষমতার অধিকারী। প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ কারো নেই। আগের নির্বাচনগুলোতে নির্বাচন কমিশন থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হয়নি। এবার তা হবে কেন জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এবারেও কোনো সমস্যা হবে না বলেই আশা করছি।’ জানা যায়, এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় রিটার্নিং অফিসাররা ২৭ ডিসেম্বরের পরে সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র সরবরাহ করবেন। -কালেরকণ্ঠ ২৩ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে