শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৯:৩৮:০২

এবার শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে তালিকা হচ্ছে অবৈধ মজুদকারীদের

এবার শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে তালিকা হচ্ছে অবৈধ মজুদকারীদের

উবায়দুল্লাহ বাদল : ভরা মৌসুমেও চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সরকারের খাদ্যগুদামে গত বছরের চেয়ে মজুদ কম থাকায় বাজারে বাড়ছে চালের দাম। গত এক মাসে মোটা চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে সাত টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

এই সিন্ডিকেট ভাঙতে ১২ দফা সুপারিশ করেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশের বড় বড় চালকল ও মোকামে নজরদারি বাড়ানো, চালকল মালিকরা যেন তাদের লাইসেন্সের বিপরীতে অনুমোদিত পরিমাণ ধান-চালের বেশি মজুদ করতে না পারেন, যেসব ধান-চাল ব্যবসায়ী ও চালকল মালিক অবৈধ মজুদ করে চালের বাজার অস্থির করে তুলছেন, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে ইত্যাদি।

গোয়েন্দা সুপারিশের ভিত্তিতে অবৈধ চাল মজুদকারীদের তালিকা তৈরি করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তালিকা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে অবৈধ মজুদকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এরই মধ্যে দেশের বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রডাক্টস লিমিটেডের মালিক আব্দুর রশিদ ওরফে চাল রশিদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ দপ্তরে বলেন, ‘প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। অপরাধ অনুযায়ী বড় ধরনের জরিমানা করা হচ্ছে।

গ্রেপ্তার, আটকও করা হচ্ছে।’ আমন সংগ্রহ কর্মসূচি চলমান থাকায় কঠোরভাবে অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন খাদ্যসচিব।

গোয়েন্দা সুপারিশে আরো বলা হয়—চালকল মালিক, করপোরেট ব্যবসায়ী, মজুদদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের সমন্বয়ে গড়া সিন্ডিকেটের চালের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। চালকল মালিকরা যেন তাদের লাইসেন্সের বিপরীতে অনুমোদিত পরিমাণের বেশি মজুদ করতে না পারেন, সে জন্য সরকারিভাবে নিয়োগ করা পরিদর্শক কর্মকর্তাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিমাণ ধান-চাল সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে।

নজরদারি পদ্ধতি ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনতে হবে। প্রতারণা রোধে চালের বস্তার গায়ে উত্পাদনকারী মিলের নাম, জেলা ও উপজেলার নাম, উত্পাদনের তারিখ, মিল গেট মূল্য এবং ধান বা চালের জাত উল্লেখ করার সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে। ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল নির্ধারিত সময়ে আমদানি ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে টিসিবি এবং ওএমএস কর্মসূচি আরো জোরদার করতে হবে। কৃষিপণ্য বিপণনে হাতবদল কমাতে এবং চাহিদা ও সরবরাহের বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সমন্বয়ে একটি সুসংগঠিত বাজারকাঠামো তৈরি করতে হবে। কৃষি বিপণন আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী মুনাফার হার নির্ধারণ করে কঠোর নজরদারি করতে হবে। এলাকাভিত্তিক চাহিদা নিরূপণ করে মজুদের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করতে হবে। এ ছাড়া সরকারবিরোধী স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যাতে কোনো ধরনের গুজব বা অপপ্রচার চালাতে না পারে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গত ৫ নভেম্বরের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৬২ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এর মধ্যে চাল ছয় লাখ ৭৩ হাজার ৩৯৩ টন, গম চার লাখ ১৯ হাজার ৩৭৭ টন এবং বাকি এক হাজার ১৯১ টন ধান। গত বছরের এই সময়ে সরকারের খাদ্য মজুদ ছিল অন্তত ১৪ লাখ টন। এর মধ্যে চালই ছিল ১২ লাখ টনের বেশি। গত বছরের তুলনায় এবার খাদ্য মজুদ অন্তত তিন লাখ টন কম। সম্প্রতি চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলার ভয়াবহ বন্যায় ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ায় এবার ধান-চালের উত্পাদন কম হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চাল ব্যবসায়ীদের একটি অসাধু সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে সুযোগ বুঝে চাল মজুদ করে বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয়। এই সিন্ডিকেটে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীও আছেন, যারা সরকারের নানা কৌশল সিন্ডিকেটের কাছে ফাঁস করে ফায়দা নেন। গত ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর সিন্ডিকেট কিছুটা ঘাপটি মেরে থাকলেও সম্প্রতি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে চালের দাম। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে চাল সিন্ডিকেটের বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয় সরকারের শীর্ষ মহল। সম্প্রতি ওই প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী দেশের বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রডাক্টস লিমিটেডের মালিক আব্দুর রশিদ ওরফে চাল রশিদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে