শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৮:৪৮:০১

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়া নিয়ে অবশেষে যা জানা গেল

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়া নিয়ে অবশেষে যা জানা গেল

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : অর্থনীতির বর্তমান টালমাটাল পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আপাতত পাচ্ছেন না মহার্ঘ ভাতা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ভাতা সংক্রান্ত নথি পাঠালে সায় না দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে। তারা জানিয়ে দিয়েছে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আপাতত এ ভাতা দেওয়া সমীচীন হবে না। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিষয়টি ফের বিবেচনা করা যেতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানা যায়, সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীকে মূল বেতনের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার খসড়া প্রস্তুত করেছিল অর্থ বিভাগ। তবে ইতোমধ্যে পাওয়া সরকারি চাকরিজীবীর বাড়তি ৫ শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) বাদ দেওয়ার সুপারিশও করা হয়। অর্থ বিভাগের হিসাবে এটি বাস্তবায়নে এক অর্থবছরে বাড়তি খরচ হবে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানিয়েছে, মহার্ঘ ভাতার বাড়তি অর্থায়নের হিসাব করা হয়েছে চলতি বাজেটের বরাদ্দের ভিত্তিতে। তবে প্রতিবছর বাজেটে বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ ৬ থেকে ৮ শতাংশ বাড়ে। সে হিসাবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দাঁড়াতে পারে প্রায় সাড়ে ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে মহার্ঘ ভাতা বাবদ যোগ হতো আরও প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় হতো প্রায় সাড়ে ৯৬ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনশীল মুদ্রানীতির পাশাপাশি সরকারি ব্যয়ে কাটছাঁট করার কথা বলা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এখনই মহার্ঘ ভাতা দেওয়াটা যৌক্তিক সময় নয়।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পক্ষে অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এমন তো নয় যে সরকারি কর্মচারীরা খুব কম বেতনে চাকরি করছেন। ২০১৫ সালের পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীর বেতন বেসরকারি খাতের চেয়ে বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। উপসচিব হলেই বিনা সুদে গাড়ির ঋণ এবং সেই গাড়ি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতি মাসে বাড়তি ৫০ হাজার করে টাকাসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। তার পরও বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া থেকে সরে আসাটাই যৌক্তিক।

উল্লেখ্য, সাধারণত পাঁচ বছর অন্তর একটি নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করার কথা। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুলাইয়ে অষ্টম বেতন কাঠামো কার্যকর হয়। সে সময় নতুন কাঠামোর সুপারিশ না করলেও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার প্রস্তাব ছিল বেতন কমিশনের। তবে ২০২৩ সালের জুলাইয়ের আগপর্যন্ত প্রতিবছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে আসছিলেন। পরে বাড়তি মূল্যস্ফীতির কথা বলে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণাসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়ে আসছিলেন সরকারি চাকরিজীবীরা। এ পরিস্থিতিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। পরে তা কার্যকর না হলেও বিশেষ সুবিধা হিসেবে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি মূল বেতনের আরও ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়। ফলে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন।

এদিকে, মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে কিছুটা স্বস্তি দিতে আবারও মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে গত ১১ ডিসেম্বর জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর আওতাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা সংস্থানের বিষয় পর্যালোচনার জন্য কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। তথ্যসূত্র : সমকাল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে