মঙ্গলবার, ০৬ মে, ২০২৫, ১২:১৬:৪৪

অসহায় বৃদ্ধ দম্পতির জীবন বদলে গেল একটি ফেসবুক পোস্টে

অসহায় বৃদ্ধ দম্পতির জীবন বদলে গেল একটি ফেসবুক পোস্টে

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : সন্তানরা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন বৃদ্ধ মা বাবাকে এমন একটি পোস্ট গত দু’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসছিলো। 

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের দিশাবন্দ এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার ফেসবুক ওয়ালে দেয়া এ পোস্টটি এলাকার মানুষদের নাড়া দিয়েছে। তাদের ঠাঁই হয়েছে মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পাশে একটি পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরে। নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে এসে রাস্তার পাশে একটি পরিত্যক্ত কক্ষে অসহায় দিনাতিপাত করছেন তারা। 

ঘটনাটি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার দিশাবন্ধ এলাকার। সেখানে বৃদ্ধ বয়সে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন সত্তোরোর্ধ আরব আলী ও মাকসুদা দম্পতি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাড়ি থেকে বের হয়ে উপজেলা পরিষদের পাশে একটি পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরেই উঠেন আরব আলী ও মাকসুদা দম্পতি। চারদিকে টিনের বেড়া থাকলেও সেখানে নেই বিদ্যুৎ, পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা। প্রচণ্ড গরমে দম বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা। কেউ খাবার কিনে দিলে খান এভাবেই কাটছে তাদের সময়। এক সময় মনোহরগঞ্জ বাজারে ব্যবসা ছিল, বাড়ী, সন্তান-সন্ততি সবই ছিল বৃদ্ধ আরব আলীর। ছেলেদের কারণে ধার দেনায় পড়েছেন তিনি। বৃদ্ধ বয়সে এসে এখন আর কিছুই নেই। রিক্তহস্তে নিজের ভিটেমাটি ছেড়েছেন এ দম্পতি। বয়সের ভারে ন্যুজ সত্তোরোর্ধ আরব আলী এখন আর কর্ম করতে পারেন না। 

স্থানীয়রা জানান, নানা অসুস্থতায় কাটছে স্ত্রী মাকসুদা বেগমের দিন। নিজেদের থাকা খাওয়া ঔষধপত্র নিয়ে বৃদ্ধ বয়সেও সংগ্রাম করে চলেছেন। মনোহরগঞ্জ উপজেলা সদরের মনোহরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এর সামনেই তার বাড়ি। তিন ছেলের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়েছেন নিজের সম্পত্তি। নানা সমস্যায় জর্জরিত সন্তানরাও বর্তমানে তার পাশে নেই। মেজো ও ছোট ছেলে বাড়ীর জায়গা বিক্রি করে ভিটেমাটি ছেড়েছেন অনেক আগেই। নিজের থাকার জন্য রাখা বসতের জায়গাটুকুও বিক্রি করে ফেলেন তিনি (আরব আলী)। থাকতেন বড় ছেলের ঘরে। দু’দিন হলো সে ঘরও ছেড়েছেন। নেই ব্যবসা বাণিজ্য, নেই আগের জৌলুস। সন্তানদের কাছে কমেছে কদর। 

এ বিষয়ে কথা হলে বৃদ্ধ আরব আলী ও মাকসুদা দম্পতি জানান, নানা অজুহাতে তাদেরকে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছেন তার  বড় ছেলের বৌ। পরে উপায়ান্তর না দেখে উপজেলার পাশে একটি পরিত্যক্ত ঘরে আশ্রয় নেন এ দম্পতি। এমন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের থাকা, খাওয়া, ঔষধ সব ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা জানান। এমন আন্তরিকতার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান তারা। 

এদিকে সকালে সোমবার সকালে নিজ কার্যালয়ে ডেকে এনে তাদের খোঁজ খবর নেন মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহরিয়া ইসলামে। তাদের খাওয়া দাওয়া ঔষধপত্রের ব্যবস্থা করেন। তাছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বৃদ্ধ এ মা-বাবার পাশে দাঁড়াতে সহযোগিতার হাত বাড়ান তিনি। তাদের উপজেলার দিশাবন্দ আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করা, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় ঔষধের ব্যবস্থা করা, উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিস কর্তৃক ভিজিডি কার্ডের ব্যবস্থাসহ তাদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। 

এ বিষয়ে কথা হলে মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহরিয়া ইসলাম ইত্তেফাক-কে বলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্ট থেকে তিনি বিষয়টি অবগত হন। তাদের সাহাযার্থে চিকিৎসা, ভিজিডি, বয়স্কভাতা ও পুর্নবাসনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান তিনি। উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এ বৃদ্ধ দম্পতির পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে