গ্রামীণফোন একাডেমির মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভর ও বাস্তবমুখী দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছেন দেশের তরুণেরাছবি: সুমন ইউসুফ
তরুণদের দক্ষ করে তুলতে বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের আছে নানা উদ্যোগ।
একেক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ একেক রকম। গুগলের যেমন আছে ‘গ্রো উইথ গুগল’। এই প্ল্যাটফর্মে আপনি ব্যবসা ও পেশাসংক্রান্ত নানা প্রশিক্ষণ পাবেন। মাইক্রোসফটের আছে ‘লার্ন মাইক্রোসফট’, ওপেনএআইয়ের ‘ওপেনএআই একাডেমি’। বাংলাদেশে গ্রামীণফোনও নিজেদের মতো করে একটি উদ্যোগ নিয়েছে, নাম গ্রামীণফোন একাডেমি। এর মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভর ও বাস্তবমুখী দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছেন দেশের তরুণেরা। কী কী সুযোগ আছে জানতে গত ২৭ এপ্রিল আমরা গিয়েছিলাম বসুন্ধরার জিপি হাউসে।
পথের দিশা
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে অনেক তরুণই হতাশ হয়ে পড়েন। হতাশার বড় একটা কারণ—প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে অন্যান্য দক্ষতার ঘাটতি। এই ব্যবধান ঘোচাতেই কাজ করছে গ্রামীণফোন একাডেমি। এটি এমন এক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শুধু সনদ নয়, বাস্তবজীবনে প্রয়োগযোগ্য জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ আছে। এখন পর্যন্ত দেড় লাখের বেশি মানুষ গ্রামীণফোন একাডেমিতে নিবন্ধন করেছেন। সনদ পেয়েছেন ৬৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী।
রাজশাহী কলেজের সৈয়দা সায়রা বেগমের গল্পটাই শোনা যাক। স্নাতক শেষে তিনি ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। এরপর গ্রামীণফোন একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। তিনি বলেন, ‘গ্রামীণফোন একাডেমি থেকে ইউআই/ইউএক্স (ইউজার ইন্টারফেস/ইউজার এক্সপেরিয়েন্স) বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। এখন চাকরি না করে ফ্রিল্যান্সিং করছি। প্রশিক্ষণের সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের এক ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ৫০ ডলারে কাজ পাই। সেই থেকে আমার পথচলা শুরু।’
আন্তর্জাতিক মানের কোর্স
আন্তর্জাতিক মান ও পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে সাজানো হয়েছে গ্রামীণফোন একাডেমির বিভিন্ন কোর্স—জানালেন উদ্যোক্তারা। তরুণেরা গ্রামীণফোন একাডেমি থেকে সিসকো নেটওয়ার্কিং একাডেমির বিভিন্ন কোর্স করার সুযোগ পাচ্ছেন। বিভিন্ন কোর্স শেষে যে সনদ মিলছে, তা পেশাদার দুনিয়ায় বেশ গ্রহণযোগ্য।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তরুণ আবদুল রাজ্জাক ২০১৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে কর্মী হিসেবে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখান থেকে ২০২২ সালে দেশে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, ‘ফিরে এসে নিজের কিছু করার চেষ্টা করছিলাম। গাইবান্ধায় কিছু করা বেশ কঠিন। তখন গ্রামীণফোন একাডেমির প্রশিক্ষণ নিই। ওয়েব ডিজাইনের কাজ শিখেছিলাম। পরে মাইক্রোসফট এক্সেল, মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের দক্ষতা অর্জন করি। ইংরেজিতে যোগাযোগের বিভিন্ন কৌশল শিখি। প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় ৫০০ ডলারের একটি কাজ পেয়েছিলাম। এখন মাসে ৫০০-৬০০ ডলারের অনেক কাজ করছি।’
ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ শোনালেন তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘গ্রামীণফোন একাডেমি থেকে আমি ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ ও কাজ নেওয়ার কৌশল শিখেছি। নানা ধরনের সফট স্কিল (যোগাযোগ দক্ষতা, প্রেজেন্টেশন, সময় ব্যবস্থাপনা) থেকে শুরু করে ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, প্রোগ্রামিং ভাষা, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, রিমোট জব প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স করার সুযোগ আছে।’ কনটেন্ট বানানোর আয় থেকে বাড়িও করেছেন লোকমান। নাম দিয়েছেন ‘ইউটিউব বাড়ি’।
সুযোগ সারা দেশে
গ্রামীণফোন একাডেমির মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও ঘরে বসে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল নিয়ে পড়ছেন ফারাবি হাসান। তিনি বলেন, ‘পড়ার সময় আমি অনেক পার্টটাইম কাজ করেছি। একসময় গেমিং ও ফেসবুকে বেশি সময় দিতাম। ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখতাম ফ্রিল্যান্সিংয়ের ওপর। নিজে কিছু করার চেষ্টা করতাম, কিন্তু কোনো গাইডলাইন ছিল না। জিপি একাডেমির প্রশিক্ষণ নিয়ে গাইডলাইন ধরে ধরে কাজ শুরু করি। আমার প্রথম কাজ ছিল একটি কুরিয়ার কোম্পানির জন্য ওয়েবসাইট তৈরির কাজ। গাইডেন্স না পেলে হয়তো কোনো আয় করতে পারতাম না।’
নারী শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে গ্রামীণফোন একাডেমি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার বলছিলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ে আমি একেবারে নতুন। শুরুর দিকে অনেক ভুল করতাম বলে কাজ পেতাম না। আস্তে আস্তে আয় করতে শুরু করি। নিজের টাকা জমিয়ে ল্যাপটপ কিনেছি। ফ্রিল্যান্সিং ফ্যাক্টরি প্রোগ্রাম থেকে আমি প্রশিক্ষণ নিই।’
হাইব্রিড মডেলের ব্যবহারিক শিক্ষা
যদিও অনলাইন প্রশিক্ষণই একাডেমির মূল ভিত্তি, তবে শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য গ্রামীণফোন একাডেমি আয়োজন করছে ‘মাস্টারক্লাস’ ও ‘ক্যাম্পাস টাউন হল’। এতে শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি প্রশিক্ষকের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর ও নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ পান। এই অফলাইন মডেল ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শহরে সাড়া ফেলেছে। গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান বলেন, ‘গ্রামীণফোনের বিশেষ উদ্যোগ গ্রামীণফোন একাডেমি, যেখানে বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করছেন অভিজ্ঞ পেশাজীবীরা। চাকরির বাইরে তরুণদের যেন বিকল্প আয়ের সুযোগ হয়, তাঁরা যেন কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে পারে, সেভাবেই একাডেমির বিভিন্ন কোর্স সাজানো হয়েছে। এসব প্রশিক্ষণ তরুণদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিচ্ছে।’
বিভিন্ন কোর্সের জন্য বিনা মূল্যে নিবন্ধন করা যাবে এই ওয়েবসাইট থেকে। অথবা যুক্ত হতে পারেন ফেসবুকের এই গ্রুপে।