বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০১৬, ১০:৩২:৩৪

বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে ‘একমত নয়’ যুক্তরাজ্য, ‘সমস্যা আরও গভীরে’

বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে ‘একমত নয়’ যুক্তরাজ্য, ‘সমস্যা আরও গভীরে’

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে মুক্তমনা লেখক, ব্লগার, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অধিকারকর্মী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে ‘একমত নয়’ যুক্তরাজ্য। মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করা হবে কি না তাও জানতে চান এক এমপি।

সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাজ্যের মিনিস্টার অব স্টেট, ফরেন ও কমনওয়েলথ অফিস হুগো সয়্যার বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার কারণে’ এসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে এবং ‘সরকারবিরোধীরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে’ এসব ঘটাচ্ছে বলে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিচ্ছেন’, তার সঙ্গে ব্রিটিশ সরকার একমত নয়।

“আমরা মনে করি, সমস্যা আরও অনেক গভীরে।”

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা চলাকালে লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার পর বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে আরও কয়েকজন ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্মগুরু, ভিন্ন মতানুসারী ও বিদেশিকে হত্যা করা হয়েছে।

এসব হত্যাকাণ্ডের অনেকগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আইএস ও আল-কায়েদার ‘দায় স্বীকারের’ বার্তা এলেও সরকার বলছে, বাংলাদেশ এসব জঙ্গি গোষ্ঠীর কোনো অস্তিত্ব নেই। দেশের ভেতরের উগ্রপন্থি দলগুলোই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।

এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধীদের দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর কূটনীতিকরা বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে উদ্বেগ জানালে তিনিও হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারবিরোধীদের দায়ী করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ‘ক্ষুণ্ন করতে’ এবং সরকারকে ‘বেকায়দায় ফেলতে’ জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। আর তাদের ‘পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে’ বিএনপি।

সয়্যারের বক্তব্যেও গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বাড়ার কথা উঠে আসে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

(প্রকাশের অযোগ্য) অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা করে খুনিদের গ্রেপ্তারের আহ্বান জানানোর কথাও পার্লামেন্টে তুলে ধরেন তিনি।

বাংলাদেশে অমুসলিম, সংখ্যালঘু, ব্লগার ও (প্রকাশের অযোগ্য)দের ওপর হামলা একটি ‘বিরাট সমস্যা’ হয়ে দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন হুগো সয়্যার।

তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশে অনেক সাহায্য দিয়ে থাকি। এ বছর এই সাহায্যের পরিমাণ ১৬২ মিলিয়ন পাউন্ড। বার বার মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।”

ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়কমন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়েইনও সম্প্রতি ঢাকা সফরে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজেও বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন হুগো সয়্যার।

যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ ষড়যন্ত্রে’ গ্রেপ্তার ব্রিটিশ বাংলাদেশি শফিক রেহমানের বিষয়ে তিনি বলেন, তাকে যথাযথ আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে নিজে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন এবং ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনার মঙ্গলবার ওই চিঠি পৌঁছে দিয়েছে।

ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাই কমিশনের ভিসা প্রসেসিং দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার কারণে অনেক বাংলাদেশিকে অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ভিসা সেন্টার ফের ঢাকায় আনা হবে কি না জানতে চাইলে হুগো সয়্যার বলেন, “প্রত্যেক দেশই তাদের রাজধানীতে ভিসা প্রসেসিং সেন্টার চায়। এশিয়াতে আমরা অনেকগুলো দেশের ভিসা প্রসেসিং মালয়েশিয়াতে স্থানান্তর করেছি। আমাদের কয়েকটি হাব রয়েছে।

“আমরা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, কেউ যদি ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে, কেন এদেশে আসতে চায় তা প্রমাণ করতে পারে তাহলে ব্রিটেনে আসার অনুমতি পাবে।”

তবে ঢাকা থেকে দিল্লিতে নথি পাঠাতে সময় লাগার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।

যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে কি না তা নিয়ে আগামী ২৩ জুন অনুষ্ঠেয় গণভোটের বিষয়েও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেন হুগো সয়্যার।

ব্রিটেন ইউরোপে থাকবে, না বেরিয়ে যাবে এ নিয়ে যুক্তরাজ্য এখন দুই ভাগে বিভক্ত। তবে হুগো সয়্যার ব্যক্তিগতভাবে ইউরোপে থাকার পক্ষে বলে জানান।

তার যুক্তি, যুক্তরাজ্য পরিবর্তিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকলে আরও ‘সমৃদ্ধ, শক্তিশালী ও নিরাপদ’ থাকবে।

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি ও কমনওয়েলথের সব নাগরিকের জন্য এটা সুফল বয়ে আনবে  মন্তব্য করে তিনি ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের ভোটে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে মাত্র ৫৩ শতাংশ ব্রিটিশ বাংলাদেশি এ বিষয়ে ভোট দিতে ইচ্ছুক। অন্যদিকে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের ৮০ শতাংশই ভোট দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। -বিডিনিউজ
২৬ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে