বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা থেকে ঝিনাইগাতি যাচ্ছিল আদিল পরিবহনের একটি বাস। ময়মনসিংহ পৌঁছলে ওই বাসে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মোর্শেদ। সামনের দিকে সিট না পেয়ে শেষ সারির ডানপাশের সিটে বসেন তিনি।
মোর্শেদের গন্তব্য শেরপুর। উদ্দেশ্য স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। পথিমধ্যে ফুলপুরের বাশাটি এলাকায় পৌঁছলে আচমকা মোর্শেদ অনুভব করেন তার ডান হাত নেই। কোনো কিছুর আঘাতে তার হাতটি বিচ্ছিন্ন হয়ে জানালা দিয়ে বাইরে পড়ে গেছে। সময় তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা।
অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। সিট থেকে উঠে মোর্শেদ বাস ড্রাইভারের কাছে ছুটে যান। তখনও বাসের যাত্রীরা বুঝে উঠতে পারেননি কি ঘটেছে। ড্রাইভার বাস থামানোর পর নিজেই নিচে নামেন মোর্শেদ। পেছনে ফেলে আসা বিচ্ছিন্ন হাতটি খুঁজতে থাকেন। এতবড় দুর্ঘটনার পরও জ্ঞান হারাননি মোর্শেদ।
আশপাশের লোকজনের কাছে সাহায্য চান তিনি। বিচ্ছিন্ন হাতটি খুঁজে পেলেও রাস্তা থেকে কেউ তা তোলার সাহস পাচ্ছিল না। অবশেষে স্থানীয় এক তরুণ এগিয়ে আসে। মোর্শেদকে তার বিচ্ছিন্ন হাতসহ বাসে তুলে দেয় সে। বাসের ড্রাইভার ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে মোর্শেদকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। ইতিমধ্যে মোর্শেদের স্ত্রী ঘটনাস্থলে আসেন।
তাৎক্ষণিকভাবে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকরা একটি অস্ত্রোপচার করলে বিচ্ছিন্ন হওয়া হাতটি আর লাগানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা ঢাকায় রেফার করেন মোর্শেদকে। কা'টা হাত নিয়ে মোর্শেদ রওনা হন ঢাকার পথে। রাত সাড়ে ৩টায় তাকে ভর্তি করা হয় ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে। মোর্শেদের বন্ধুরা রাতভর ঢাকার বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত ও নামকরা হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করেন। উদ্দেশ্য ছিল, বিচ্ছিন্ন হাতটি আবার জোড়া দেয়া যায় কিনা। কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৬ ঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ায় সেটি আর জোড়া লাগানো সম্ভব নয়। আপাতত তাকে আইসিইউতে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ৭২ ঘণ্টা পর তার আরেকটি অস্ত্রোপচার করা হবে।
দুর্ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে তা নিয়ে একাধিক বক্তব্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, মোর্শেদের হাতটি বাসের জানালার বাইরে ছিল। ট্রাকের ধাক্কায় তার হাতটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ বলেছে, ট্রাকটি বিপরীত দিক থেকে এসেছিল। আবার কেউ বলছেন, ট্রাক বাসটিকে ওভারটেক করছিল।
অপরদিকে মোর্শেদ তার বন্ধুদের বলেছেন, তার হাত বাসের ভেতরেই ছিল। কোনদিক থেকে ট্রাক এসেছে বা কীভাবে এই ঘটনা ঘটলো তা তিনি বুঝে উঠতে পারেননি। তিনি বাসের পেছনের সিটে বসা ছিলেন। এই দুর্ঘটনার খবরে তার বন্ধুমহলে সবাই শোকাহত। ঢাকায় বন্ধুরা প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন, বিচ্ছিন্ন হওয়া হাতটি কোথায় পুনঃস্থাপন করা যায়। এজন্য তারা ঢাকার নামকরা সব হাসপাতালে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তা পুনঃস্থাপন সম্ভব নয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বৃহস্পতিবার আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা ৯৯৯-এর মাধ্যমে জানতে পারেন বাশাটি এলাকায় একটি হাত পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর জানতে পারেন, বাকৃবির একজন শিক্ষক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তাকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, আদিল পরিবহনের ওই বাসটি ঢাকা থেকে ঝিনাইগাতী যাচ্ছিল। মোর্শেদ ময়মনসিংহ থেকে শেরপুর যাওয়ার উদ্দেশে ওই বাসে উঠেছিলেন এবং সবার পেছনের সারির ডানপাশের সিটে বসেছিলেন। বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক বাসটিকে অতিক্রম করার সময় মোর্শেদের হাত কেটে যায়। তখন বাসের ড্রাইভার মোর্শেদকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে নামিয়ে দেয় এবং বাস রেখে পালিয়ে যায়। বর্তমানে বাসটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।