গতকাল সোমবার রাত ১২টা ৪৮ মিনিট। জরুরি সেবা ‘৯৯৯’থেকে ফোন আসে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার ডিউটি অফিসারের নাম্বারে। অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি বলেন, ‘মহাসড়ক দিয়ে অটোরিকশা করে যাওয়ার পথে আমার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে এক দল দুর্বৃত্ত আমাকে গলায় মাফলার প্যাঁচ দিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টা করে স্ত্রীকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। দ্রুত উদ্ধারে সহযোগিতা চাই।’
এরই ঘণ্টাখানেক পরেই ওই নারীকে উপজেলার মুশলী ইউনিয়নের আমলীতলা নামক স্থানের একটি সদ্য ধান কাটা ক্ষেত থেকে শরীরে কাঁদা মাখা ও শীতে জবুথবু হয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আজ মঙ্গলবার ভোরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র ও উদ্ধার হওয়া নারীর স্বামী জানান, ওই নারীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামে। প্রায় দুই মাস আগে প্রেম করে বিয়ে করায় পরিবার মেনে নেয়নি। এ অবস্থায় নান্দাইল উপজেলার মুশলী ইউনিয়নের পালাহার গ্রামের জনৈক আব্দুস সালামের বাড়িতে একটি ঘরে ভাড়ায় উঠে স্থানীয় ভাবে ভাংগাড়ীর ব্যবসা করে। এ অবস্থায় সোমবার মধ্যরাতের দিকে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কিশোরগঞ্জের বড়পুল নামকস্থানের অন্য বাসায় চলে যাবে ওই বাড়ি ছেড়ে দিয়ে জিনিপত্র নিয়ে একটি অটোরিকশা করে বের হয়। ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশের হেফাজতে থাকা নারীর স্বামী বলেন, স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উঠেন। এ সময় পূর্ব পরিচিত অলি মিয়া ও অটোরিকশাচালক শফিক তাঁর সাথে ছিল।
ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সহাসড়ক ধরে কিছুদূর যাবার পর চার পাঁচজন অপরিচিত ব্যক্তি তাঁদের পথরোধ করে রিকশা থেকে তাঁর স্ত্রীকে জোর করে নামিয়ে নিয়ে যায়। দুর্বত্তদের কয়েকজন তাঁকে পিঠমোড়া করে বেঁধে গলায় মাফলার দিয়ে ফাঁস দেয়। তবে অলি মিয়া ও স্থানীয় রিকশা চালক মো. শফিক মিয়াকে কিছু করেনি দুর্বত্তরা। তিনি চাঁদের আলোতে দেখতে পান তাঁর স্ত্রীকে অজ্ঞাত দুর্বত্তরা টেনেহিঁচড়ে সড়কের নিচে ফসলি জমিতে নিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আর দেখতে পাননি। এমনকি ভয়ে আর এগোননি এ দৃশ্য দেখার পর তিনি জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহায়তা চান। পরে দ্রুত পুলিশ গিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর খোঁজে পেয়ে পুলিশ তাঁর স্ত্রীকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ রাতেই অলি ও শফিককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। থানায় অবস্থান করা নারীর স্বামীর কাছে স্ত্রীকে কেন উঠিয়ে নেওয়া হলো কারা জড়িত তাছাড়া যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে স্বামী মাথা নিচু করে নিরুত্তর থাকেন।
নান্দাইল থানার ওসি মো, মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর বলা যাবে ওই তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কী না। এ ঘটনা জানার জন্য তরুণীর স্বামীকে পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার সকল কিছু জানার জন্য দুইজনকে আটক করা হয়েছে।