এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মৌসুমি ভাইরাস ও মশা বাহিত লাম্পি স্কিন রোগে গত কয়েক মাসে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কয়েক হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে।
এর মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক গরুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে অর্ধশতাধিক লাম্পি স্কিন আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তবে হাসপাতালে ভ্যাকসিন না থাকায় শুধু পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে চিকিৎসা।
এ অবস্থায় দিশাহারা মানুষ অনেক বেশি টাকা খরচ করে বাইরের চিকিৎসা করাচ্ছেন। উচ্চ শক্তির এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন প্রয়োগ করছেন। এতে অধিকাংশ ক্ষেতে আক্রান্ত গরুর শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও দুর্বল হয়ে গরু মারা যাচ্ছে।
জানা যায়, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছোট বড় শত শত গরু-ছাগলের খামার গড়ে উঠেছে।
এ ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সব কৃষকের গোয়ালেই কম বেশি গরু-ছাগল রয়েছে। লাম্পি স্কীন ডিজিস হলো গবাদি পশুর মশা বাহিত মৌসুমি একটি রোগ। এই রোগে আক্রান্ত গবাদি পশুর রক্ত খেয়ে মশা অন্য সুস্থ্য গবাদি পশুর শরীরে হুল ফোটালে সুস্থ্য গবাদি পশুও এই রোগে আক্রান্ত হয়। লাম্পি স্কীনে আক্রান্ত হলে গবাদি পশুর শরীরে প্রচণ্ড জ্বর হয় (তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়) এবং শরীরে ছোট বড় অসংখ্য গুটি ও ক্ষত সৃষ্টি হয়ে আস্তে আস্তে গবাদি পশু নিস্তেজ হয়ে মারা যায়।
এ জন্য ডাক্তাররা আক্রান্ত গবাদি পশুকে পৃথক করে গোয়াল ঘরে মশারি টানিয়ে অথবা ধোয়া দিয়ে গবাদি পশুকে মশার কামড় ও লাম্পি স্কীন থেকে রক্ষা করার পরামর্শ দেন।
গত কয়েক মাসে সারা উপজেলায় কয়েক হাজার গবাদি পশু লাম্পি স্কীনে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন না থাকায় কৃষকরা বহু টাকা খরচ করে আক্রান্ত গবাদি পশু হাসপাতালে এনেও শুধু পরামর্শ ও ব্যবস্তাপত্র ছাড়া কিছু পাননি।
উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিনের ৪টি গরুর মধ্যে একটি গরু লাম্পি স্কীন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তেতুলিয়া গ্রামের কৃষক আজিজুল হকের ৭টি গরুর মধ্যে দুইটি গরু আক্রান্ত হয়েছে।
এই চিত্র শুধু পাঁচুয়া ও তেতুলিয়া নয় উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সর্বত্র। প্রতিদিন উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে লাম্পি স্কীন রোগে আক্রান্ত অর্ধশতাধিক গবাদি পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
শিলাসী গ্রামের কৃষক শহিদ মিয়া বলেন, ‘আমার একটা বাছুর এই রোগে পরছিন। এক হাজার টেহা (টাকা) হইরা ছয় দিনে ছয়ডা ইংলিশন (ইনজেকশন) দেয়া কোন রহমে বাছুরটারে বাছাইছি।’
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আরিফুল ইসলাম বলেন, লাম্পি স্কীন রোগের সরকারি কোনো ভ্যাকসিন নেই। আমরা শুধু পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র দিতে পারি। মানুষ বাধ্য হয়ে বাইরের হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে প্রাইভেট কম্পানীর উচ্চ শক্তির এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করছেন। এতে গরু আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে মারাও যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে ভেটেরিনারি সার্জন নেই। নেই মাঠ পর্যায়ে কোন কর্মীও।
আমাকে একাই হাসপাতাল সামলে অফিসিয়াল প্রয়োজনে বাইরে দৌঁড়াতে হয়। এখন গ্রামে গ্রামে গরু ছাগলের খামার গড়ে উঠেছে। যদি কমিউনিট ক্লিনিকের মতো ইউনিয়ন ভিত্তিক পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ও মাঠকর্মী থাকত তাহলে প্রাণী সম্পদের যথাযথ চিকিৎসা ও উন্নয়ন হতো।