সাকলাইন যোবায়ের: যদি লক্ষ থাকে অটুট। হৃদয়ে থাকে বিশ্বাস। তবে দেখা হবেই বিজয়ের। হৃদয়ে প্রবল বিশ্বাস আর কঠোর অধ্যবসায়ের কারণে দিনে কলেজের ক্লাস করে সন্ধ্যা থেকে অটোরিকশা চালিয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছেন মো. মাসুদ রানা।
কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নাগাইশ গ্রামের সানু মিয়ার ছোট ছেলে মাসুদ। বাবা বাজারে ঝুড়িতে মাছ নিয়ে ব্যাবসা করতেন। এখন বয়স হওয়ার কারণে গ্রামের একটি টং দোকান দিয়েছেন। চার ভাই দুই বোনসহ মাসুদের পরিবারে মোট ৮ জন লোকের বসবাস।
ধার দেনা করে অনেক কষ্টে এক ভাইকে বিদেশ পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে নানা জটিলতার কারণে থাকা সম্ভব হয়নি। ওখানের মালিক পক্ষ অল্প কদিনের মধ্যে তাকে আবার দেশে পাঠিয়ে দেয়। এত কষ্ট করে চারদিক থেকে ঋণ করে ছেলেকে বিদেশ আবার ফেরত আসায় বাবা সানু মিয়ার চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেন।
প্রতিনিয়ত সংসারের অভাব-অনটন লেগেই থাকত। সেজন্য পরিবারের ছোট ছেলে হয়েও বাবার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরার জন্য মাসুদ চালিয়েছেন অটোরিকশা।
বাবার কাঁধ থেকে ঋণের বোঝা কমানোর জন্য বেছে নিয়েছেন অটোরিকশা চালানোর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত। অরোরিকশা চালানোর পাশাপাশি অংশ নেন এবারের এইচএসসি পরীক্ষায়। এইচএসসি পরিক্ষায় মাসুদ কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
বাবার ব্যবসায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ও সংসারের হাল ধরেছেন মাসুদ রানা। রাতে এবং কলেজ বন্ধ থাকলে অটোরিকশা চালিয়ে উপার্জনের টাকা তুলে দেন বাবার হাতে।
মাসুদ বলেন, দুই ভাই বোনের লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নেই। দিনে ক্লাশ করে সন্ধ্যায় রিকশা চালাতাম। রিকশা চালিয়ে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ ও নিজের ও ছোট বোনের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছি। আমার এই অর্জন সম্ভব হয়েছে শুধু আমার মা-বাবা ও ভাইরাসহ আমাদের কলেজের পিন্সিপাল স্যার ও জাহাঙ্গীর আলম এবং রুহুল আমিনসহ অন্যান্য স্যারের জন্য। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই স্যারেরা আমাকে বিভিন্ন পরার্মশ ও লেখাপড়ার মান উন্নয়নের জন্য দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণাও দিতেন।
বাহ্মণপাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. ফারক আহম্মদ বলেন, আপনার মাধ্যমেই আমি বিষয়টি জেনেছি। মাসুদ দিনে ক্লাস করে রাতে অটোরিকশা চালিয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে। এটা অন্যন্য শিক্ষর্থীদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। সরকারিভাবে তার জন্য কিছু করার থাকলে আমরা তা করব।
বাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা কে বলেন, আসলে আমি জানতাম না। আপনার থেকেই প্রথম জেনেছি। মাসুদের ঘটনাটি আমাদের সমাজের জন্য একটি অনুপ্রেরণামূলক বিষয়। এত স্ট্রাগল করে সে এমন ভালো ফল অর্জন করেছে। এটা অনেক বড় পাওয়া। সে চাইলে আমরা প্রশাসন থেকে তাকে অবশ্যই হেল্প করব।-ঢাকা মেইল